Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় চাই গোবিন্দভোগ, চড়ছে দাম

সুগন্ধি চালের কথা উঠলেই প্রথম যার কথা মনে পড়বে, সে অবশ্যই— ‘গোবিন্দভোগ।’ নামেই পরিচয়। দিব্যি বোঝা যায় এই আতপচাল দেবতার ভোগের জন্য।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:২৪
Share: Save:

সুগন্ধি চালের কথা উঠলেই প্রথম যার কথা মনে পড়বে, সে অবশ্যই— ‘গোবিন্দভোগ।’ নামেই পরিচয়। দিব্যি বোঝা যায় এই আতপচাল দেবতার ভোগের জন্য।

গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্য, প্রাচীন এই আতপ চালের চাষ এখন হচ্ছে বর্ধমান, হুগলি, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া জেলার কয়েকটি ব্লকে। স্থানীয় মানুষের মুখের ভাষায় এই চালেরই না ‘খাসধান’। মজার কথা হল ধানের জন্মস্থানেই রয়েছে তার সুগন্ধের আসল রহস্য। গাঙ্গেয় সমভূমি এলাকায় চাষ করা হলে চালের সুরভী হয় বেশি। অন্যান্য এলাকার ধান হলে েস গন্ধের তীব্রতা কিছুটা কম থাকে।

চাহিদার তুলনায় উত্‌পাদন কম। অর্থনীতির নিয়ম মেনে তাই বরাবরই গোবিন্দভোগ চালের দামটা একটু বেশিই। দোল-দুর্গোত্‌সবে ভোগ ও নৈবেদ্যর জন্য সর্বত্র গোবিন্দভোগের চাহিদা উর্ধ্বমুখী হয়। ফলে, দামের পারদও ক্রমবর্ধমান। রাজ্যের নানা জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, গোবিন্দভোগের দাম ৬০ টাকা ছাড়াচ্ছে। মেদিনীপুরের খুচরো বাজারে প্রতি কেজি ৬০ -৬৫ টাকা। বর্ধমানের নতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে গোবিন্দভোগ ৫২-৬০ টাকা কিলোগ্রাম। মালদহের চাঁচলে তিন ধরনের গোবিন্দভোগ মিলছে, দাম ৫০, ৫৫, ও ৬০ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। চালের দানা ও গুণমান অনুসারে দামে হেরফের হয়, জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

উৎসবের মরসুমে পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, বিরিয়ানি রান্নাতেও দামি বাসমতির পরিবর্তে গোবিন্দভোগ চালকে বেছে নেন অনেকেই। তবে দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করতে গোবিন্দভোগই দরকার। মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় এক সময় তিথি মেনে মাপা চালে ভোগ রান্না হত বলে জানালেন রাজ পরিবারের প্রবীণ সদস্য শঙ্করপ্রসাদ গর্গ। যেমন মহাষষ্ঠীর দিনে ৬ মন গোবিন্দভোগের অন্নভোগ দেওয়া হত। মহাসপ্তমীতে ৭ মন। মহাষ্টমীতে ৮ মন আর মহানবমীতে ৯ মন। পুজোর দিনগুলিতে কয়েক হাজার পাত পড়ত। সে সব এখন ইতিহাস। পরিমাণ কমে গেলেও আজও বিশুদ্ধ গোবিন্দভোগ চালেই অন্নভোগ হয়।

আবার মহিষাদলের বুলেট ক্লাব পরিচালিত সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক শুভব্রত মাইতি জানালেন, নবমীর দিনে সর্বসাধারণকে ভোগ খাওয়ানো হয়। এ বছর ভোগে বৈচিত্র্য আনতে খিচুড়ির পরিবর্তে গেবিন্দভোগের ফ্রায়েড রাইস ও মটরশুটি-পনির খাওয়ানো হচ্ছে। শুভব্রতবাবুর কথায়, “সুগন্ধ ও স্বাদে গোবিন্দভোগের কোনও বিকল্প নেই। তাই বরাবরই আমরা নবমীর ভোগে গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার করি।”

বাঁকুড়ার চাল ব্যবসায়ী সুব্রত দাস, হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী প্রশান্তকুমার মাইতি, সকলেই জানালেন, পুজোর মরসুমে বাসমতী, কালিজিরা, বাদশাভোগের মতো সুগন্ধী চালকে ছাড়িয়ে যায় গোবিন্দভোগ। বাঁকুড়া শহরের শুভঙ্কর সরণির সর্বজনীন পুজোয় সপ্তমী ও দশমীতে পাত পেড়ে খায় গোটা পাড়া।

পুজো কমিটির সম্পাদক অশোক রায় বলেন, “বরং পুজোর জাঁকজমকে কাটছাঁট করতে পারি, কিন্তু সুগন্ধী চাল বাদ দিতে পারব না।” বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের দিঘল গ্রামে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ির পুজো শতাব্দী-প্রাচীন। পরিবারের বধূ পিউ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পায়েস ও অন্নভোগে গোবিন্দভোগ চালের প্রথা ভাঙা সম্ভব নয়।”

উত্তরবঙ্গের অবশ্য রয়েছে নিজস্ব পছন্দের স্থানীয় সুগন্ধী চাল। তুলাইপাঞ্জিতে অন্নভোগও হয়। মালদহের চাঁচলে জানা গেল, তুলাইপাঞ্জি চাল ৬৫ টাকা কেজি, লক্ষ্মীভোগ ৫০-৫৫ টাকা, বাসফুল ৪৬ টাকা, কালোখাসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ‌উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের মোহিনীগঞ্জে তুলাইপাঞ্জি এখন প্রতি কেজিতে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০- ৮৫ টাকা।

সেখানে পুজো কমিটির কর্তা থেকে গৃহস্থ মানুষ, সকলেই উদ্বিগ্ন। ইসলামপুরেও ভাল মানের তুলাইপাঞ্জি ৮০ টাকা ছুঁয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE