Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শেষ দিন পর্যন্ত ছিল বিশ্লেষণী তাজা মন

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য-ইতিহাস-সংস্কৃতির বিদগ্ধ গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। শনিবার বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। সুকুমারীদেবীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, তাঁর দেহ দান করা হচ্ছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে এ দিন সন্ধেয় তাঁর মরদেহটি রাখা হয়। কাল, সোমবার দেহদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সুকুমারী ভট্টাচার্য

সুকুমারী ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য-ইতিহাস-সংস্কৃতির বিদগ্ধ গবেষক সুকুমারী ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। শনিবার বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। সুকুমারীদেবীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী, তাঁর দেহ দান করা হচ্ছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে এ দিন সন্ধেয় তাঁর মরদেহটি রাখা হয়। কাল, সোমবার দেহদানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

জন্ম মেদিনীপুরে ১৯২১ সালের ১২ জুলাই। তবে সুকুমারীদেবীর শিক্ষাজীবন প্রধানত কলকাতাতেই। বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে বলে স্নাতকোত্তর স্তরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়তে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ইংরেজি এমএ ক্লাসে ভর্তি হন, তখন পরীক্ষা প্রায় ঘাড়ের উপরে। তা-ও সসম্মান উত্তীর্ণ হন সুকুমারীদেবী। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে প্রাইভেটে সংস্কৃত এমএ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন তিনি।

বুদ্ধদেব বসুর আমন্ত্রণে লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ছেড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যোগ দেন সুকুমারীদেবী। পরে চলে যান সংস্কৃত বিভাগে। সেখানেও তাঁর ধর্মীয় পরিচয় ঘিরে সহকর্মীদের একাংশের আপত্তিতে সমস্যা হয়। অবসরের পরেও তাঁর সারস্বত-চর্চা থামেনি। ইংরেজি, বাংলায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৫-এর বেশি। সুরেশচন্দ্র মজুমদার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মাননার মতো স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের মতে, “ওঁর কাজ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে।”

আশি-নব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছেও পরের পর নতুন দিক নিয়ে গবেষণায় মেতে থেকেছেন সুকুমারীদেবী। লিখেছেন বই। প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, পুরাণ, ইতিহাস, রীতি-আচারকে বুঝতে, বোঝাতে চেয়েছেন সমকালের প্রেক্ষিতে। ছাত্রছাত্রী থেকে সুহৃদবর্গ বরাবরই যেটা দেখেছেন, সেই কথাই বললেন প্রাচীন মহাকাব্য গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, “ছাত্রছাত্রীরা ওঁর সঙ্গে তর্ক করলে খুশি হতেন। আর সুকুমারীদি যে যুগের থেকে এগিয়ে ভাবতেন, তাঁর ‘ইন্ডিয়ান থিওগনি’ বইটিই তার প্রমাণ।” বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য, নিয়তিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ, বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা, বিবাহপ্রসঙ্গে প্রভৃতি বই সুকুমারীদেবীর মৌলিক বিশ্লেষণী চিন্তার স্বাক্ষর। সপ্তাহখানেক আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান একদা ছাত্রী, লেখক নবনীতা দেবসেন। তখন লোকসভা ভোট সবে মিটেছে। জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সুকুমারী সে-দিন নানা কথা বলেছিলেন। নবনীতার কথায়, “ওঁর শরীর ভাঙলেও মন তাজা ছিল। বয়সকালে অনেকেই আত্মকরুণায় পীড়িত হন, নিজের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে থাকেন সুকুমারীদি সে-সবের শতহস্ত দূরে।”

স্বামী ইংরেজির সুপণ্ডিত অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন আগেই। মেয়ে-জামাই ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার ও সুমিত সরকার। তাঁরা দিল্লি প্রবাসী। কলকাতায় একাই থাকতেন সুকুমারীদেবী। নিজের পড়াশোনা বা তরুণতররা কে কী পড়ছেন, ভাবছেন, তা নিয়ে আগ্রহে কখনও ভাটা পড়েনি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। পর দিন দুপুরে থমকে গেল সচল-সজীব মননে ঋদ্ধ একটি জীবন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

decease sukumari bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE