রাজ্যে তাদের প্রশ্নাতীত আধিপত্য সত্ত্বেও বহরমপুর, আসানসোল এবং মালদহের দু’টি আসনে দলের ভরাডুবির পরে ঘোর অস্বস্তিতে তৃণমূল।
মর্যাদার ওই চার আসনে পরাজয়ের ক্ষত শুকনোর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র দলীয় কোন্দল। নিজেদের ‘ত্রুটি’ আড়াল করতে শুরু হয়েছে স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীদের পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি। কোথাও বা রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জেলার ওই নেতারা তাঁদের দলীয়প্রতিপক্ষকে দুষছেন!
আসানসোলে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র কাছে দোলা সেন বিপুল ভোটে হেরে যাওয়ার জেরে পরে ওই কেন্দ্রে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা মলয় ঘটককে কৃষিমন্ত্রী এবং জেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। অন্য দিকে, বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে জয়ের পরে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মহম্মদ আলির দিকে তোপ দেগেছেন রেজিনগরের প্রাক্তন বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। তিনি এ দিন স্পষ্টই জানান, দলের জেলা নেতারা তাঁকে একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নির্বাচনের কাজই করতে দেননি। কোন্দলের ছবিটা আরও প্রকট হয়েছে মালদহে। সেখানে তৃণমূল দু’টি আসনই খোয়ানোর পরে রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সাংবাদিকদের ডেকে জেলা সভানেত্রী এবং আর এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘অন্তর্ঘাতের’ অভিযোগ তুলেছেন। পাল্টা অভিযোগ এনেছেন সাবিত্রীদেবীও।
একটি বেসরকারি লজে এ দিন দুপুরে বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী তথা সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রীদেবী। সেখানে আমন্ত্রণ পাননি কৃষ্ণেন্দু। ইংরেজবাজার পুরসভায় বসে কৃষ্ণেন্দু বিকেলেই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “যারা ডাকাত, সমাজবিরোধী, যারা সরকারি প্রকল্পের টাকা খেয়েছে, তাঁদের সঙ্গে সাবিত্রীদেবী কী করছেন?” পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুর অভিযোগ, মালদহে এসে তৃণমূল নেত্রী সাবিত্রীদেবীকে বলেছিলেন, ‘যা কাজ করবি, কৃষ্ণেন্দুকে সঙ্গে নিয়ে করবি।’ তিনি বলেন, “অথচ জেলা সভানেত্রী আমাকে না জানিয়েই ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করছেন। মালদহের বুকে দলটাকে শেষ করে দিয়েছেন উনি! ব্যাঙ্ক ডাকাতি, বাসে ডাকাতিতে অভিযুক্তদের দলে দায়িত্ব দিচ্ছেন!”
সাবিত্রীদেবী যা শুনে বলেছেন, “পর্যটনমন্ত্রীকে সতর্ক করে দিচ্ছি ওঁর ভাষা ব্যবহার নিয়ে! ওঁর জানা উচিত, আমি দলের জেলা সভানেত্রী। যে কোনও সময় মিটিং ডাকতেই পারি।” তাঁর আরও বক্তব্য, মালদহের দু’টি কেন্দ্রে কেন হারতে হল, সেই রিপোর্ট তাঁকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জমা দিতে হবে। কারা দলবিরোধী কাজ করল, তা জানতেই তিনি ব্লক ও টাউন সভাপতিদের ডেকেছিলেন।
মুর্শিদাবাদে দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুনের ক্ষোভ আবার শুধু জেলা সভাপতিই নয়, খোদ প্রার্থীর বিরুদ্ধেও। তিনি খোলাখুলিই বলছেন, “নির্বাচনে আমাকে লড়াই করতে হল তিন শত্রুর বিরুদ্ধে কংগ্রেস, আরএসপি এবং অবশ্যই দলের একাংশ।” তাঁর তির দলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলির দিকে। মহম্মদের পাল্টা জবাব, “হ্যাঁ, তাঁকে সর্বত্র ব্যবহার করা যায়নি কতকগুলি সাংগঠনিক কারণে।”
হুমায়ুনের দাবি, দলনেত্রী এসে বহরমপুর লোকসভার নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর উপরে। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতাদের কান ভারী করে তাঁর ক্ষমতা ক্রমেই ছাঁটা হতে থাকল। হুমায়ুনের কথায়, “শেষতক বলা হল, রেজিনগরের বাইরে যেন আমি পা না রাখি! তা সত্ত্বেও আমার রেজিনগর কেন্দ্রেই সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন দলীয় প্রার্থী।”
বিক্ষুব্ধ ওই নেতার অভিযোগ, দলে তিনি ক্রমেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠছেন দেখে মহম্মদ ও তাঁর অনুগামীরা পদ খোয়ানোর আশঙ্কায় ভুগছিলেন। তাই তাঁরা দলের শীর্ষ নেতাদের হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ‘কান ভারী’ করতে থাকেন। অধীরের বিরুদ্ধে ‘অকারণ’ মিথ্যে মামলা করা থেকে একাধিক ‘ভুল সিদ্ধান্তে’র বিরুদ্ধে আগেই সরব হয়েছিলেন হুমায়ুন। সেই তালিকায় এ দিন তাঁর নতুন সংযোজন দলীয় প্রার্থীর ‘উৎসাহ-হীনতা’। তিনি বলেন, “শুধু রেজিনগরে সাকুল্যে ৬টি সভা করেন ইন্দ্রনীল। অথচ অধীরকে দেখুন এই এলাকাতেই করে গিয়েছেন ১৭টি সভা। এ ভাবে হয়!” এই অভিযোগ সম্পর্কে ইন্দ্রনীলের প্রতিক্রিয়া অবশ্য জানা যায়নি।
জেলায় জেলায় দলীয় কোন্দল নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বও। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “না জেনে মন্তব্য করতে পারব না। তবে এ ব্যাপারে দলনেত্রীর নির্দেশের কথা সকলেই জানেন। আশা করি, সকলেই সেই কথা মাথায় রেখে কাজ করবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy