পাকেচক্রে নানা প্রান্ত থেকে তাঁরা এসে পড়েন যৌন পল্লিতে। চাইলেও সেখান থেকে নিজেরা বেরিয়ে আসবেন, এমন ক্ষমতা অধিকাংশ মহিলারই থাকে না। সরকারি বা কোনও বেসরকারি উদ্যোগে উদ্ধার পেলেও তাঁদের নিয়ে টানাপড়েন চলতেই থাকে। যেমন মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন যৌন পল্লি থেকে উদ্ধারের পরে কোনও মহিলা বাংলায় কথা বললেই তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তার পরে তাঁদের কী হবে, তার ঠিক থাকে না।
শশীদেবীর অভিযোগ, যৌন পল্লি থেকে যে-সব মহিলাকে উদ্ধার করা হয়, তাঁরা আদতে কোথা থেকে এসেছেন, তা যথাযথ ভাবে খতিয়ে না-দেখেই মহারাষ্ট্র সরকার সরাসরি তাঁদের বাংলার হোমগুলিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারছে না। কারণ, সরকারি স্তরে এই ব্যাপারে কোনও যোগাযোগই করা হচ্ছে না। মন্ত্রী জানান, এই ব্যবস্থা বন্ধ করতে আজ, শুক্রবার মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের একটি চুক্তি হচ্ছে। ওই চুক্তিতে বলা থাকছে, যৌন পল্লি থেকে উদ্ধারের পরে কোনও মহিলা বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাঁকে নির্বিচারে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। ওই মহিলা আদতে কোন রাজ্য বা কোন দেশের বাসিন্দা, তা ঠিকঠাক চিহ্নিত করার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পেটের দায়ে কাজের খোঁজে, অনেক সময় প্রতারকের প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে, আবার কখনও কখনও আড়কাঠির পাল্লায় পড়ে নিত্যদিন অজস্র কিশোরী-তরুণী যৌন পল্লিতে পৌঁছে যান। সঙ্গে সঙ্গে উবে যায় প্রেম। মুক্তির জন্য ডানা ছটফটালেও অনেকেই আর ফিরতে পারেন না। সীমান্ত পেরিয়ে আসা এমন মেয়ের সংখ্যা অগণ্য। মাঝেমধ্যে সরকারি উদ্যোগে পুলিশের তৎপরতায় কোনও কোনও মেয়েকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময়েই পরিবারের অবহেলা এবং প্রতিবেশীদের বিদ্রুপ তাঁদের আবার যৌন পল্লিতে ফিরে যেতে বাধ্য করে। হোমে ঠাঁই মিললেও স্বস্তির জীবন অধরাই থেকে যায় ওই মেয়েদের। নানা ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাভাষী অনেক মেয়েরই ঠাঁই হয় মুম্বইয়ের বিভিন্ন প্রান্তের যৌন পল্লিতে। মহারাষ্ট্র সরকার এমন কিছু কিছু মেয়েকে উদ্ধার করছে ঠিকই। কিন্তু ওই সব মেয়ের ভবিষ্যতের কথা না-ভেবে পত্রপাঠ তাঁদের বাংলায় ঠেলে পাঠাচ্ছে বলে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশীদেবীর অভিযোগ।