Advertisement
E-Paper

২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু, বাতিল সমস্ত ছুটি

বৃষ্টি চলছেই। জমা জলে দুর্ভোগ কাটছে না জেলার গ্রামীণ এলাকারও। মেমারি ১ ও ২ নম্বর, বর্ধমান ২ নম্বর ব্লক, জামালপুর, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট এলাকা-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দাবি। দাঁইহাট, কাটোয়া, গুসকরা শহরের একাংশেও জল জমেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০২:৩৭
কাটোয়ার স্কুলে ত্রাণ শিবিরে আসছেন বাসিন্দারা।

কাটোয়ার স্কুলে ত্রাণ শিবিরে আসছেন বাসিন্দারা।

বৃষ্টি চলছেই। জমা জলে দুর্ভোগ কাটছে না জেলার গ্রামীণ এলাকারও। মেমারি ১ ও ২ নম্বর, বর্ধমান ২ নম্বর ব্লক, জামালপুর, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট এলাকা-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দাবি। দাঁইহাট, কাটোয়া, গুসকরা শহরের একাংশেও জল জমেছে।


কেন বিপদ
গত দু’দিন দরে নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুন মাসের প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯১৫ মিলিমিটারের মতো। স্বাভাবিকের তুলনায় যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মরসুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বলে খবর। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৩৩ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। বুধবার দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কিউসেক। রাতের দিকে আরও জল ছাড়া হতে পারে জানা গিয়েছে। ভাগীরথীর জল বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। কুনুর ও অজয়ের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। বাঁকা, খড়ি নদীতেও জল বাড়ছে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

পূর্ব রেলের ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া লাইনে লক্ষ্মীপুর স্টেশনের কাছে ধস নামায় দীর্ঘক্ষণ ট্রেন চনাচল বন্ধ ছিল। মেমারি-জামালপুর চকদিঘি রোড, বর্ধমান-কালনা রোডের একাংশ, কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের খরিনান, পারদুপসা, বড় দুপসা, নতুনগ্রাম, ঘুঘুডাঙা এলাকার বহু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৭ ফুট উচ্চতায় জল জমেছে রামেশ্বরপুর-দুপসা রাস্তায়। জমা জল বের করার জন্য স্থানীয় চাষিরা নবদ্বীপ ও সাতগাছিয়া রোডের বিভিন্ন অংশে রাস্তা কেটে দিয়েছেন। ফলে বুধবার সকাল থেকে মন্তেশ্বর এলাকাতেও বাস চলাচল বন্ধ ছিল। কালনা ২ ব্লকের ভুরকুণ্ডা গ্রামেও ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি হওয়া একটি রাস্তা কেটে দেন চাষিরা।

পাশে প্রশাসন

কাটোয়া মহকুমাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ও বাকি মহকুমাগুলিতে ১ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ত্রাণের ঘাটতি পড়লে মিড ডে মিলের চাল দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের কর্তারা কাটোয়ার বেশ কয়েকটি জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। বুধবার নাদনঘাটের বিভিন্ন ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। স্পিডবোটেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হিউম পাইপ লাগিয়ে অস্থায়ীভাবে রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করছে পঞ্চায়েত সমিতি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন নান্দাইয়ে যান কালনা ১-এর বিডিও সব্যসাচী রায়চৌধুরি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, মহকুমা ও ব্লক স্তরে ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।

ক্ষতির হিসেব

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর চাষজমি জলের তলায়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে দশ হাজার বাড়িও আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর।

ত্রাণ শিবির

মেমারি ২ নম্বর ব্লক, জামালপুর, কেতুগ্রাম, কালনার বিভিন্ন এলাকা-সহ জেলা জুড়ে মোট ৮০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। শিবিরে রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। দাঁইহাটের মহিলা উচ্চ বিদ্যালয়, কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তন, ভারতী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়, নাদনঘাট রামপুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, নাদনঘাট অন্নপূর্ণা বালিকা বিদ্যালয়, কুণ্ডুপাড়া উচ্চবিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির।

কর্তারা জানান

জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন বলেন, ‘‘জরুরি পরিস্থিতিতে সমস্ত ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রাস্তাঘাট স্বাভাবিক রাখতে পূর্ত বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বিডিওদের জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দামোদর সেচ বিভাগের বাস্তুকার শ্যাম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও নদী বাঁধের ক্ষতি না হলেও প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।’’ কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, ‘‘গোটা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেচ দফতরের পাঠানো সতর্কবাতা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, বৃহস্পতিবার ব্লকগুলিতে ত্রাণ বাবদ চিঁড়ে, গুড়, কেরোসিন তেল, গুঁড়ো দুধ, ত্রিপল ও কেরোসিন তেল পাঠানো হবে।

বুধবার জলমগ্ন এলাকার ছবিগুলি তুলেছেন
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুমিতা মজুমদার ও উদিত সিংহ।

Bardhaman control room east railway train bandel kalna
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy