Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মদের ভাটি ভাঙতে গিয়ে প্রহৃত যুবক, অভিযোগ বাদুড়িয়ার গ্রামে

তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে মদের ভাটি ভাঙতে গেলে আর এক তৃণমূল নেতার প্রতিরোধের মুখে পড়লেন গ্রামের মহিলারা। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারিতে জখম হলেন তৃণমূলেরই এক যুবক।

অভিযানে সামিল মহিলারা। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযানে সামিল মহিলারা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০২:০১
Share: Save:

তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে মদের ভাটি ভাঙতে গেলে আর এক তৃণমূল নেতার প্রতিরোধের মুখে পড়লেন গ্রামের মহিলারা। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারিতে জখম হলেন তৃণমূলেরই এক যুবক।

বাদুড়িয়ার বাগজোলা গ্রামের ওই ঘটনায় দিব্যেন্দু আইচ নামে আহত ওই যুবককে রুদ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহত হন সাংবাদিকেরাও। সজল চট্টোপাধ্যায় নামে এক চিত্র সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। তাতে প্রায় দু’ঘণ্টা বাদুড়িয়া-মসলন্দপুরের মধ্যে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের উপরে হামলা হোক, তা আমরা চাই না। কারা এমন ঘটনায় যুক্ত তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ আব্দুল আর্সাদের নেতৃত্বে গ্রামের মহিলারা বাগজোলার কাহারপাড়ায় চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে যান। জীবন কাহার নামের এক মদ কারবারির বাড়ি থেকে পাওয়া চোলাই মদ ফেলে পাত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা। সে সময়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। জীবনের পরিবারের মহিলারা দাবি করতে থাকে, শুধুমাত্র তাদের বাড়িতে ঢুকে মদ নষ্ট করা চলবে না। মদ নষ্ট করতে হলে চোলাই কারবারের সঙ্গে যুক্ত ওই পাড়ার আরও ছ’জনের বাড়ি থেকেই মদ ফেলে দিতে হবে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধলে সুশান্ত কাহার নামের এক তৃণমূল নেতা ওই বাহিনীর উপর লাঠি, কোদাল, বল্লম নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি বেধে যায়।

সম্প্রতি বাদুড়িয়ার বিভিন্ন বাজারে চোলাই মদের কারবার বেড়েছে। কলকাতার বেলগাছিয়া থেকে প্রতিদিন ভোরের বনগাঁ লোকালে চোলাই আসছে মসলন্দপুরে। সেখান থেকে ছোট গাড়িতে করে মদের ড্রাম চলে আসছে বাদুড়িয়ার বাগজোলা বাজারে। এলাকায় চোলাইয়ের রমরমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুষ্কৃতীদের উপদ্রব। মদের রমরমা আটকাতে সম্প্রতি একটি বাহিনী গড়ে তোলেন গ্রামের মহিলারা। গত ১৯ জুলাই তাঁরা বেশ কিছু মদের ঠেক ভেঙে গুড়িয়ে দেন। নষ্ট করে দেওয়া হয় কয়েকশো লিটার মদ।

এ দিন ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রাস্তার বাগজোলা বাজারে তৃণমূলের নেতৃত্বেই রাস্তা অবরোধ করেন ওই মেয়েরা। বাদুড়িয়া থানার ওসি কল্লোল ঘোষ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। চোলাইয়ের ব্যবসা বন্ধ এবং মারধরে যুক্তদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে দুপুর ২টো নাগাদ অবরোধ ওঠে।

এ দিন চোলাইয়ের ঠেক ভাঙতে যাওয়া রত্না, বাসন্তীরা বলেন, “বাড়ির পুরুষেরা ভ্যান টেনে কিম্বা জনমজুরি খেটে সামান্য যেটুকু আয় করেন, মদেই তা শেষ হয়ে যায়। অথচ ছেলেমেয়েদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য আমাদের পরের বাড়িতে কাজ করতে হয়। স্বামীরা মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মহিলাদের উপর অত্যাচার করে। বাচ্চাদের পড়াশোনা করতে দেয় না। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ পুলিশ অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই ঘটনায় যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ আব্দুল আর্সাদ বলেন, ‘‘সুশান্ত এক সময়ে সিপিএম করত। এখন তৃণমূল করে। ওর নেতৃত্বে এ দিন যা হল, তা লজ্জার।’’

তবে বাদুড়িয়া ব্লক তৃণমূল নেতা তুষার সিংহ বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনায় জড়িতদের দল প্রশ্রয় দেয় না। শেখ আব্দুল আর্সাদ দলের সঙ্গে যুক্ত হলেও দিবেন্দু দলের কেউ নয়।” তাঁর আরও দাবি, মারধরের সময়ে সুশান্ত কাহার ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি বলেন,“দিব্যেন্দুরা বহিরাগত লোকজন নিয়ে জীবন কাহারকে মারধর ও তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে মহিলারা বাধা দেন। তবে পুলিশ নিয়ে চোলাই মদের ঠেক উচ্ছেদ করতে গেল এমন ঘটনা ঘটত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE