Advertisement
০২ মে ২০২৪

চুড়ির ব্যবসাই কাল, দাবি বিয়ে পাগল মফিজুলের

মেয়েরা এলে কী বলতেন চুড়িওয়ালা? “চুড়ি নেহি ইয়ে মেরা দিল হ্যায়?” নাকি অন্য কিছু? সেটা এখনও পুরোপুরি জানতে পারেনি পুলিশ। তবে এটুকু জেনেছে, মেলায় ঘুরে ঘুরে চুড়ির ব্যবসা চালানোর সুবাদেই বহু মহিলার সঙ্গে ইয়ার-দোস্তি হত মফিজুল মিদ্দের। আর নরম-সরম হাত ধরে গদগদ ভাবে চুড়িওয়ালা ভাব জমাতো খদ্দেরদের সঙ্গে। সেই সুতো গড়াতো বিয়ে পর্যন্ত।

নির্মল বসু
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৬
Share: Save:

মেয়েরা এলে কী বলতেন চুড়িওয়ালা?

“চুড়ি নেহি ইয়ে মেরা দিল হ্যায়?” নাকি অন্য কিছু?

সেটা এখনও পুরোপুরি জানতে পারেনি পুলিশ। তবে এটুকু জেনেছে, মেলায় ঘুরে ঘুরে চুড়ির ব্যবসা চালানোর সুবাদেই বহু মহিলার সঙ্গে ইয়ার-দোস্তি হত মফিজুল মিদ্দের। আর নরম-সরম হাত ধরে গদগদ ভাবে চুড়িওয়ালা ভাব জমাতো খদ্দেরদের সঙ্গে। সেই সুতো গড়াতো বিয়ে পর্যন্ত। অন্তত তিন বারের হিসেব পেয়েছে পুলিশ। বিয়ে-পাগলা চুড়িওয়ালাকে দু’দুবার গ্রেফতারও করেছে। জেরায় তার আরও কীর্তি-কলাপ সামনে আসবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

বৃহস্পতিবার হাসনাবাদ থানার পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ‘লভ স্টোরি’র নায়ক মফিজুল। ওই এলাকারই জয়গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল সারা বছর মেলায় মেলায় দোকান নিয়ে ঘোরে। বছর কুড়ি আগে তার প্রথম বিয়েটা হয়েছিল হাসনাবাদের আমলানির মোহনপুর গ্রামের লতিফুল বিবির সঙ্গে। সে বারও মফিজুলের থেকে চুড়ি কিনতেই এসেছিলেন তার ভাবী স্ত্রী। চুড়ি পরানোর ছলে হাত ধরে যে আলাপের শুরু, তা গাঢ় হয়ে দু’জনের হৃদয় ছুঁয়েছিল। শেষমেশ বিয়ে।

কিন্তু সারা বছর নতুন নতুন মহিলার সঙ্গে আলাপের এমন সুবর্ণ সুযোগ যে ব্যবসায়, সে ব্যবসাদারের মতি যে মাঝে মধ্যে হেলবে-দুলবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে! বছর আটেক আগে প্রথম স্ত্রী এবং মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় মফিজুল। তারপর শুরু নতুন অভিযানের।

ঝাড়া হাত-পা মফিজুল সে বার দোকান দিয়েছিল রামেশ্বরপুরের খড়ুরগ্রামের মেলায়। পুলিশ জানতে পেরেছে, সেখানে চুড়ি পরতে এসেছিলেন আঞ্জুরা। চুড়ির দোকানদার নির্ঘাত তাঁকে আকারে-প্রকারে বুঝিয়েছিলেন, এ বন্ধন চুড়ি দিয়ে শুরু হলেও সেখানেই থেমে থাকার নয়। অতএব, শুরু হয় রোমান্স এবং পরিণতিতে ফের বিয়ে। এ পক্ষের একটি ছেলেও হয়।

কিন্তু কথাটা কোনও ভাবে পাঁচকান হয়ে যাওয়ায় গোল বাধে। মফিজুলের প্রথম পক্ষের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। ধরা পড়ে মফিজুলের ঠিকানা হয় শ্রীঘর।

কিন্তু ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়।

পুলিশ জানায়, কিছু দিন জেল খাটার পরে ছাড়া পেয়ে ফের পুরনো ব্যবসায় ফেরে মফিজুল। হৃদয়ে যার মজনুর খাস তালুক, তাকে ঠেকায় কার সাধ্যি। জয়গ্রামের মেলায় আফরোজাকে দেখে মনে ধরে মফিজুলের। কিশোরী আফরোজাকে সে নাকি বলেছিল, “তোমার হাত কত সুন্দর! চুড়ি পরাতে কষ্টই হয় না। নখ যেন আয়না! নেলপালিশ পরিয়েও ভাল লাগে!”

ব্যস, গাঁয়ের মেয়েটি তো গলে জল। আর সেই স্রোতে ভেসে তিন নম্বর বিয়েটাও সেরে ফেলে মফিজুল। কিন্তু প্রেমের পথে কতই না কাঁটা! মাস তিনেকের মধ্যেই দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জুরা জেনে ফেলেন আফরোজার খবর। তিনিও নালিশ জানান থানায়। এ বারও ধরা পড়ে মফিজুল। সব জেনে হতবাক আফরোজা।

স্বামী গ্রেফতার হওয়ার পরেও এখনও যেন মফিজুল সম্পর্কে ঘোর কাটেনি তরুণীর। বললেন, “এমন সুন্দর সুন্দর যে কথা বলেছিল, তাকে কি ভাল না বেসে থাকা যায়?”

হাজতে ঢুকেও মফিজুলের মন যেন এখনও মানতেই চায় না, কী এমন অপরাধ সে করেছে। আনমনে বলে, “ব্যবসাটাই কাল হল। সারা বছর মেলায় মেলায় ঘুরে মেয়েদের চুড়ি পরাই বলে কেউ ভরসাই করতে চায় না। কিছু দিন থাকার পরে বৌরাই তো আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তাই সঙ্গী পেতে ফের বিয়ে করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mafijul hasnabad nirmal basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE