E-Paper

আর ভাগ দিতে হবে না, বকেয়া পেয়ে মিলল স্বস্তিও

শিবপদ জানান, বছর কয়েক আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে ৩৭ দিনের কাজের জন্য ৫৭০০ টাকা ঢুকেছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪ ০৫:০৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

এতদিনে স্বস্তি পেলেন ওঁরা।

১০০ দিনের কাজের মজুরি মিলল। ভাগও (কাটমানি) দিতে হল না।

আদিবাসী ও তফসিলি প্রধান সন্দেশখালির বহু মানুষ ১০০ দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল। রাজ্যে পালাবদলের কয়েক বছর পর থেকে ধীরে ধীরে শেখ শাহজাহান ও তার বাহিনীর দাপট বাড়তে থাকে এ তল্লাটে। অভিযোগ, তারা থাবা বসিয়েছিল এখানকার ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের উপার্জনেও। অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলেই বেশিরভাগটা তাঁদের তুলে দিতে হত শাহজাহানের লোকজনের হাতে। না হলে জুটত মার।

আন্দোলনের জেরে শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা-সহ কয়েকজন এখন হাজতে। তাদের অনুগামীদেরও এখন সন্দেশখালিতে দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক দিনে বহু গ্রামবাসী রাজ্য সরকারের ঘোষণামতো ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরি পেয়েছেন। কিন্তু এ বার আর কাউকে ভাগ দিতে হচ্ছে না। সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা শিবপদ কান্ডার এখন মনে করছেন, আন্দোলনটা আরও আগে হওয়া দরকার ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলন যদি আরও আগে হত, তা হলে কষ্টের টাকা শিবুদের হাতে তুলে দিতে হত না। এখন ওরা গ্রেফতার হয়েছে। এখন কাটমানি নেওয়ার সাহস নেই কারও।’’

শিবপদ জানান, বছর কয়েক আগে ১০০ দিনের প্রকল্পে ৩৭ দিনের কাজের জন্য ৫৭০০ টাকা ঢুকেছিল তাঁর অ্যাকাউন্টে। তাঁর অভিযোগ, শিবুদা (শিবপ্রসাদ) দলবল পাঠিয়ে সেই টাকা নিয়ে যায়। না দিলে? শিবপদ বলেন, ‘‘না দিলে শিবুদার অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে কোদালের বাট দিয়ে মারের ভয় ছিল।’’

বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েতের এক মহিলা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান তপন সর্দার স্বামীর গলায় দা ধরে একশো দিনের কাজের টাকা তুলে দিতে বলেছিল। বাধ্য হয়ে যে কয়েক হাজার টাকা পেয়েছিলাম, দিয়ে দিই।’’

গ্রামবাসীদের অনেকের দাবি, একশো দিনের কাজের সুপারভাইজ়ার ও কর্মীদের মাধ্যমে নেতারা জানতে পারতেন টাকা কে কত পাচ্ছেন। শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা এলেই নেতারা লোক পাঠিয়ে টাকা নিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতা তপন সর্দার এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। তাঁর স্ত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সন্দেশখালি ২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, এখানকার প্রায় ৬ হাজার শ্রমিকের প্রায় ২ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ৫৩১০ জনকে দেওয়া হয়েছে। সন্দেশখালি এবং বেড়মজুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকা কিছুদিন উত্তপ্ত থাকায় টাকা দেওয়ার আগে নথি যাচাই পর্ব বিঘ্নিত হয়। তাই এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার অনেকে এখনও টাকা পাননি। বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বেশিরভাগ মানুষের বকেয়া টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু বাকি আছে। সেই কাজ চলছে।’’ সন্দেশখালি ১ ব্লকেও বকেয়া মেটানো চলছে।

বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েতের কাছারি গ্রামের বাসিন্দা তপন সর্দার, কাজল সর্দার, মনোজ দাসরা অবশ্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন। তপন বলেন, ‘‘এ বার গ্রামের তৃণমূল নেতারা খুব চাপে। আন্দোলনের জেরে কেউ গ্রেফতার হয়েছে, কাউকে আবার পুলিশ খুঁজছে। বাড়িতে যারা আছে তারাও টুঁ শব্দ করছে না। যদি আগে আন্দোলন হত, তবে নেতারা কাটমানি খেতে পারত না।’’

সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো মানছেন, কিছু নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, ‘‘দল ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে। গ্রামের মানুষ জানেন, মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই তাঁরা টাকা পেলেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।’’ তবে, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘এ সব বলে লাভ হবে না। সন্দেশখালির আন্দোলন তৃণমূলের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছে। লোকসভা ভোটেই তা দেখা যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy