Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Death

Death by Electrocution: খেলতে খেলতে মাকে খুঁজে চলেছে তিয়ান

রহড়া থানার বন্দিপুর-পাতুলিয়ার সরকারি আবাসনের ‘ডি-৫৪’ বাড়িতে বাবা রাজা দাস, মা পৌলমী দাস ও দাদা শুভর সঙ্গে থাকত আবীর।

আশ্রয়: ঠাকুরমার সঙ্গে তিয়ান। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়: ঠাকুরমার সঙ্গে তিয়ান। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৭
Share: Save:

‘আমার মা কোথায়?’ মামার বাড়িতে আসার পরে এক বারই প্রশ্নটা করেছিল চার বছরের তিয়ান দাস। কোনও মতে চোখের জল চেপে মামা-মামিমারা জানিয়ে ছিলেন, তার মায়ের শরীর খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে গিয়েছে। সঙ্গে বাবা, দাদাও রয়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে শিশুমন সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছে। তাই বার বার মা-বাবার জন্য বায়না না করলেও, প্রিয় খেলনা ব্যান্ড বাজানোর ফাঁকে মাঝেমধ্যেই জিজ্ঞাসা করছে, “কখন আসবে ওরা?” একরত্তি ভাগ্নেকে কী উত্তর দেবেন, বুধবার সকাল থেকে তা বুঝে উঠতে পারছেন না মামা তুলসী বিশ্বাস। বদলে, তিয়ান ওরফে আবীরের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল। সেখানেই নিজের পছন্দের গান খুঁজে তার তালে ব্যান্ড বাজাচ্ছে ওই খুদে। যা দেখে লুকিয়ে চোখের জল ফেলছেন পরিজনেরা। তাঁরা বলছেন, “ও তো বুঝতেও পারছে না, কত বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।”

রহড়া থানার বন্দিপুর-পাতুলিয়ার সরকারি আবাসনের ‘ডি-৫৪’ বাড়িতে বাবা রাজা দাস, মা পৌলমী দাস ও দাদা শুভর সঙ্গে থাকত আবীর। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানেই জলবন্দি ঘরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় রাজা, পৌলমী ও শুভর। তার পর থেকে রুইয়া ভেড়ির গেট এলাকায় মামার বাড়িতে রয়েছে আবীর। সঙ্গে গিয়েছেন তার ঠাকুরমা বুলু দাস। তিনি থাকতেন রাজাদের কোয়ার্টার্সের উল্টো দিকের ব্লকে। ছেলে, বৌমা ও নাতির জন্য মাঝেমধ্যেই চোখের জল ফেলছেন বুলুদেবী। আর তা দেখতে পেলেই ছুটে এসে জল মুছিয়ে আবীর বলছে, “মামমাম (ঠাকুরমাকে এই নামে ডাকে আবীর) কাঁদছ কেন?” নিজেকে সামলে বুলুদেবী প্রশ্ন করছেন, “নীলদাদা (শুভর ডাকনাম) কোথায় রে?” মুচকি হেসে আবীর বলছে, “ও তো আকাশে গিয়েছে, চলে আসবে বলো!” কখনও বলছে, “আমার মা-বাবা মরে গিয়েছে...না-না।”

আবীরের জেঠিমা পূর্ণিমা বলেন, “আবীরকে স্থানীয় সারদা বিদ্যাপীঠ স্কুলে এবং শুভকে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন পৌলমী। সব শেষ।’’ মঙ্গলবার রাতে বুলুদেবীর সঙ্গে ঘুমিয়েছে আবীর। নাতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে বার বার চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছেন বৃদ্ধা।
মনে পড়েছে সে দিনই সকালে বাজারে ছোট ছেলে রাজার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। এ দিন বুলুদেবী বলেন, “অনেকে ত্রাণ শিবিরে চলে গেলেও রাজা বলেছিল, সেখানে ছেলে-বৌমাকে নিয়ে যেতে পারবে না। আমার বাজার হয়েছে কি না, সে কথা জিজ্ঞাসা করল। দুপুর ১টা
নাগাদ ফোনে কথাও হয়।’’ বৃদ্ধা জানান, দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি পৌলমীর মোবাইলে ফোন করলে সেটি ধরে আবীর বলে, ‘মামমাম তাড়াতাড়ি এস। বাবা, মা, দাদা জলে পড়ে রয়েছে। কথা বলছে না।’ নাতির কথায় বিপদের আঁচ পেয়েই কোমর সমান জল ভেঙে ছুটে গিয়ে বৃদ্ধা দেখেছিলেন, একে একে ছেলে, বৌমা, নাতির দেহ বাইরে এনে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়েরা।

বুলুদেবী জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে যা মনে হচ্ছে, স্ট্যান্ড ফ্যানের সুইচ দিতে গিয়েই ঘটে বিপদ। কারণ ওই পাখাটিতে কয়েক বার সমস্যা হয়েছিল। ঘরে জল থাকায় পাখাটির কিছুটা অংশ জলে ডুবে ছিল। আবীরের থেকে পরিজনেরা জেনেছেন, দুপুরে খাইয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন পৌলমী। জলে নামলে পোকা কামড়াবে, তাই খাট থেকে নামতেও বারণ করেছিলেন। আচমকা ঘুম ভাঙতেই উঠে বসে আবীর দেখেছিল, জলে পড়ে রয়েছে মা-বাবা-দাদা। বার বার ডাকলেও কেউ সাড়া না দেওয়ায়, জানলা দিয়ে পা বার করে চিৎকার করে প্রতিবেশীকে ডাকে সে।

বুলুদেবীর কথায়, “রাজা খুব সাবধানি ছেলে ছিল। সে-ই কি না এমন ভুল করল! এখন কী করে আবীরকে রাখব।’’ ছুটে আসে আবীর। ঠাকুরমার গলা জড়িয়ে বলে ওঠে, “মা-বাবা যখন আসবে, তখন চলে যাব। এখন তোমার কাছে থাকি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Electrocution Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE