Advertisement
E-Paper

বাদাম বেচেও পড়া চালিয়েছে সাইন

সংসারের চরম আর্থিক দূরবস্থার মুখেও দমে যায়নি সাইন। কখনও বাদাম বিক্রি করে, কখনও বিড়ি বেঁধে কিংবা ভ্যান রিকশা টানার পরে রাত জেগে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের এই ছাত্রটি। মাধ্যমিকে সব ক’টি বিষয়ে লেটার নিয়ে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪২ নম্বর। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ছেলেটি। তাকে নিয়ে গর্বিত পরিবার-পরিজন ও শিক্ষকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:০৬
ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরে থেকেও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে সাইন।—নিজস্ব চিত্র।

ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরে থেকেও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে সাইন।—নিজস্ব চিত্র।

সংসারের চরম আর্থিক দূরবস্থার মুখেও দমে যায়নি সাইন। কখনও বাদাম বিক্রি করে, কখনও বিড়ি বেঁধে কিংবা ভ্যান রিকশা টানার পরে রাত জেগে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের এই ছাত্রটি। মাধ্যমিকে সব ক’টি বিষয়ে লেটার নিয়ে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪২ নম্বর। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ছেলেটি। তাকে নিয়ে গর্বিত পরিবার-পরিজন ও শিক্ষকেরা।

হাসনাবাদের কুমারপুকুরের গাবতলায় বাড়ি ছিল সাইন মণ্ডলদের। বছর চোদ্দো আগে স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলেমেয়েকে নিয়ে খাদিজা বেওয়া চলে আসেন তাঁর ভাইয়ের বাড়ি হিঙ্গলগঞ্জের সাহাপুরে। সাইনের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। বিড়ি বাঁধা থেকে শুরু করে পরের জমিতে কাজ করে সন্তানদের নিয়ে কোনও রকমে দিন গুজরান হয় খাদিজার। কিন্তু ছেলেমেয়েকে তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চেয়েছিলেন। টাকার অভাবে গৃহশিক্ষক রাখতে না পারলেও মেয়ে রেশমা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ে বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে সে। দিদির মতো মায়ের বিড়ি বাঁধার কাজে সাহায্যের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে সাইন।

টাকার অভাবে গৃহশিক্ষক রাখতে ছিল না তার। যা নজরে পড়ায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন ঘোষ স্কুল ছুটির পরে সাইনকে ইংরেজি পড়াতে শুরু করেন। গ্রামের বাসিন্দা দীপঙ্কর দাস সাইনের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে বিজ্ঞান পড়িয়েছেন। বই, খাতা, পেন দিয়েও সাহায্য করতেন।

সাইনের কথায়, ‘‘আমাদের বড় করতে মা বহু কষ্ট করেন। আমার ভাল ফল চেয়েছিলেন তিনি। শিক্ষকেরাও ভরসা রেখেছিলেন আমার উপরে। রেজাল্ট ভাল হওয়ায় আমি খুশি।’’ সাইন জানায়, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তার। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে আগামী দিনে কী ভাবে পড়া চালিয়ে যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে আছে ছেলেটি।

সাইনের কথায়, ‘‘আসলে দিনের বেলা অন্যের জমিতে কাজ করার পরে রাত জেগে মা বিড়ি বাঁধেন। সবই আমাদের পড়ার জন্য। মায়ের কষ্ট আমাকে আরও জেদি করে তুলেছে।’’ ছেলেটি জানায়, সময় পেলে রিকশা চালিয়েছে। এলাকায় কোনও অনুষ্ঠান হলে বাদামের ডালি নিয়ে বিক্রি করে দু’পয়সা আয় করেছে। সাইন বলে, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, লক্ষ্য ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছনো যায়। তাই সব কাজের পাশাপাশি দিন-রাতে ৮-১০ ঘণ্টা পড়তাম।’’

খাদিজার কথায়, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর পরে ঠিক করেছিলাম যত কষ্টই হোক না কেন সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করব। একমাত্র তা হলেই হয় তো কখনও আমাদের সংসাদের দুঃখ ঘুচবে।’’ চোখের জল মুছে মা বলে চলেন, ‘‘আমাদের অভাব এতটাই যে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে ছেলেটার মুখে নুন-পান্তা আর গুড়ের বেশি কিছু তুলে দিতে পারতাম না। তা সত্ত্বেও জানতাম ও ঠিক ভাল ফল করবে।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন ঘোষ বলেন, ‘‘ছেলেটা পড়াশোনা ছাড়া অন্য বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য নেই। তাই তো ওকে স্কুল ছুটির পরে পড়াতাম। আমরা ঠিক করেছি, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই ব্লকের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া এমন এক জন মেধাবী ছাত্রের ভর্তির ফি-সহ বইপত্রও স্কুলের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।’’

student hingalganj money teacher economy southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy