Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
বাড়ি বাড়ি শৌচালয় তৈরিতে সাড়া ফেলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ

‘নির্মল কাকদ্বীপ’ গড়তে চাপ অন্দরমহল থেকেও

বিজ্ঞাপনে প্রিয়ঙ্কা ভারতীর কৃতিত্ব নিয়ে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় বিদ্যা বালনকে। সেই প্রিয়ঙ্কা, যিনি বিয়ের দু’দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসার সাহস দেখিয়েছিলেন, সেখানে শৌচালয় ছিল না বলে। বিজ্ঞাপনে বিদ্যার মুখে জানা যায়, পরে নববিবাহিতা স্ত্রীর দাবি মেনে নিয়েছিলেন স্বামী।

বদল: দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলে ফেলে বাড়িতে শৌচাগার বানিয়েছেন উত্তমবাবু। নিজস্ব চিত্র

বদল: দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলে ফেলে বাড়িতে শৌচাগার বানিয়েছেন উত্তমবাবু। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

বিজ্ঞাপনে প্রিয়ঙ্কা ভারতীর কৃতিত্ব নিয়ে উচ্ছ্বসিত দেখা যায় বিদ্যা বালনকে। সেই প্রিয়ঙ্কা, যিনি বিয়ের দু’দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসার সাহস দেখিয়েছিলেন, সেখানে শৌচালয় ছিল না বলে। বিজ্ঞাপনে বিদ্যার মুখে জানা যায়, পরে নববিবাহিতা স্ত্রীর দাবি মেনে নিয়েছিলেন স্বামী।

পুরুলিয়ার ঝালদার মধুমিতা মাহাতো আবার শৌচালয়ের দাবি নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে কুল করতে না পেরে ক’দিন আগে সটান হাজির হন থানায়। তাঁর দাবিও মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন স্বামী।

লাগাতার প্রচার আর প্রশাসনের উদ্যোগ যে সত্যিই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে, এ সব ঘটনা তারই প্রমাণ। ইদানীং এই বদলে যাওয়া অভ্যাসের সাক্ষী থাকছে কাকদ্বীপ মহকুমাও। এখানেও বহু পরিবারের মহিলাদের ভিতর থেকে শৌচালয় তৈরির দাবিটা উঠে আসছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে ‘নির্মল জেলা’ গড়ার লক্ষ্যে প্রশাসনের প্রচার এবং তৎপরতা বাস্তবেও কাজে এসেছে। জেলাশাসক পিবি সেলিম দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে আসার পরে গোটা জেলাকে ‘নির্মল’ করে গড়ার লক্ষ্য নেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরো জেলায় ইতিমধ্যেই ৭ লক্ষ ১০ হাজার ৫০০টি শৌচাগার তৈরি করে ফেলেছি। পুরো জেলাকে উন্মুক্ত শৌচবিহীন বলে ঘোষণা করতে দেরি হবে না।’’

কাকদ্বীপ মহকুমার সব ক’টি ব্লককেই ইতিমধ্যে ‘নির্মল’ হিসাবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এলাকার গ্রামে ঘুরে দেখা গেল, সত্যিই কানে জল ঢুকেছে মানুষের। স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। বাড়িতে শৌচালয় তৈরির জন্য এখন চাপ আসছে অন্দরমহল থেকে।

মধুসূদনপুর পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সদানন্দ সর্দার ছোট মাছ বিক্রেতা। তিন সদস্যের পরিবারে আয় মাস গেলে মাত্র আড়াই হাজার টাকা। একটি গরু ছিল। শৌচালয় তৈরির টাকা জোগাড় করার তাগিদে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘৯০০ টাকাও জোগাড় করে উঠতে পারছিলাম না।

পরিবারের চাপেই সিদ্ধান্ত নিলাম, গরু বিক্রি করে হলেও শৌচাগার বানাব।’’ স্ত্রী প্রমীলা জানান, আগে পরিবারের সকলে খোলা মাঠে যেতেন। কিন্তু ইদানীং বুঝতে পেরেছেন, মাঠেঘাটে প্রাকৃতিক কাজ সারলে রোগ ছড়ায়। সামাজিক সম্ভ্রমহানিও হয়।

কাকদ্বীপের প্রান্তিক শ্রমিক উত্তম ঘোড়ুই সরকারি সাহায্যের অপেক্ষা না করে নিজেই বাড়িতে শৌচাগার বানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যখন তালিকায় নাম তোলার সময় এল, তখন হাতে টাকা ছিল না। তারপর যখন টাকা হল, তখন দেখলাম সুযোগ চলে গিয়েছে।

তাই নিজের খরচেই শৌচাগার বানাচ্ছি। তিনি জানালেন, বাড়ির মেয়েরাও আজকাল মাঠেঘাটে যেতে চায় না। যে ভাবেই হোক, শৌচালয় না বানিয়ে উপায় ছিল না।

মানুষের সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমনই প্রশাসনের প্রচার ও নজরদারিও চোখে পড়ার মতো। পাড়া নজরদারি কমিটি নিয়মিত খেয়াল রাখছে মাঠেঘাটে কেউ শৌচকর্ম করছেন কিনা, সে দিকে। পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুর অঞ্চলের ইন্দ্রনারায়ণপুরের পাড়া নজরদারি কমিটির মাথা স্বপন বারিক জানালেন, ভোর ৪টে উঠে নিয়মিত নজর রাখা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Administration Kakdwip Nirmal Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE