Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কামারশালায় বসে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তাপস

বছর ষোলোর ছেলেটি বাড়িতে তার ঠাকুরদা পঞ্চানন রায়ের সঙ্গে কাঁচা লোহা আগুনে পুড়িয়ে, সেই লোহা পিটিয়ে কাস্তে-নিড়ানি তৈরির কাজ করে। কামার পরিবারের ছেলে সে। বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসায় ছেলেও হাত লাগাবে, এ আর নতুন কী?

দাদুর সঙ্গে তাপস। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দাদুর সঙ্গে তাপস। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

সীমান্ত মৈত্র
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

বছর ষোলোর ছেলেটি বাড়িতে তার ঠাকুরদা পঞ্চানন রায়ের সঙ্গে কাঁচা লোহা আগুনে পুড়িয়ে, সেই লোহা পিটিয়ে কাস্তে-নিড়ানি তৈরির কাজ করে। কামার পরিবারের ছেলে সে। বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসায় ছেলেও হাত লাগাবে, এ আর নতুন কী? খোঁজ করলে এমন উদাহরণ বহু। তবে সেই ছেলেই যখন মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৭৯ নম্বর পায়, তখন সেটা আর সাধারণ ঘটনা থাকে না। হয়ে যায় ব্যতিক্রমী।

দেগঙ্গা থানা এলাকার পূর্ব চ্যাংদোনা গ্রামের কিশোর তাপস রায় সেই ব্যতিক্রম। গোটা গ্রাম তার ফলের জন্য গর্বিত। তবে এত ভাল ফল করেও মনের মধ্যে খচখচানি তার থেকেই গিয়েছে। কারণ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় যারা দশম স্থান পেয়েছে তাদের প্রাপ্ত নম্বর (৬৮০) থেকে ১ নম্বর কম পেয়েছে তাপস। মাত্র ১ নম্বর কম হওয়ার জন্য মেধা তালিকায় ঠাঁই হয়নি তার। তাপসের কথায়, ‘‘১ নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় প্রথম দশে থাকতে না পেরে আপসোস হচ্ছেই।’’ পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে সে ব্যক্ত করে তার সঙ্কল্প— ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে চেষ্টা করব আপসোসটা মেটাতে।’’

স্থানীয় কার্তিকপুর দেগঙ্গা আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্র তাপস। স্কুলে প্রথম থেকেই প্রথম হয়ে আসছে সে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় সে। তবে পারিবারিক আর্থিক অনটন তাকে কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলেছে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে খরচও প্রচুর। মাধ্যমিকে স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে লেখাপড়ায় প্রচুর সাহায্য করেছেন। মাত্র একজন গৃহশিক্ষক ছিলেন তাপসের।

বাবা বাবলু রায় ও ঠাকুরদা পঞ্চানন বাড়িতেই কামারের কাজ করেন। পরিবারের সদস্য ৬। তাপসকেও কেন ওই কাজ করতে হয়? উত্তর দিলেন বাবলু। তাঁর কথায়, ‘‘শ্রমিক দিয়ে কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। একজন শ্রমিককে দিতে হয় দিনে ৪০০ টাকা। শ্রমিককে ওই টাকা দিলে নিজেদের লাভ বলে আর কিছু থাকে না। তা ছাড়া ওই কাজে শ্রমিকও পাওয়া যায় না। কারণ আগুনের তাপে পুড়ে কেউ কাজ করতে চান না। ফলে তাপসকে কাজ করতেই হয়। বিশেষ করে আমি যখন থাকতে পারি না বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকি, তখন ওকেই বাবাকে সাহায্য করতে হয়।’’

কাঁচা লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের লাভ বিশেষ থাকে না। বাড়িতে তৈরি জিনিস বাবলুরা স্থানীয় দেগঙ্গা বাজারে বিক্রি করেন। এই ভাবেই সংসার চলছে। তাপসের ভাই মিলন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

ঠাকুরদার কাছ থেকে কাস্তে নিড়ানি মতো জিনিসপত্র তৈরি ইতিমধ্যেই শিখে ফেলেছে তাপস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Examination 2018 Results Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE