Advertisement
০৮ মে ২০২৪
কামারহাটি

স্লোগানের আওয়াজ ঢাকতে লাউডস্পিকারে গানের গুঁতো

কার চোঙা কত ‘শক্তিশালী’! এক দিকে বাজছে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের দাবি ঘোষণার চোঙা, অন্য দিকে তাঁদের আওয়াজ যাতে কারখানার ভিতরে না যায় তাই আরেকটি চোঙায় দেশাত্মবোধক গান চালিয়ে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

চলছে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

চলছে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫২
Share: Save:

কার চোঙা কত ‘শক্তিশালী’!

এক দিকে বাজছে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের দাবি ঘোষণার চোঙা, অন্য দিকে তাঁদের আওয়াজ যাতে কারখানার ভিতরে না যায় তাই আরেকটি চোঙায় দেশাত্মবোধক গান চালিয়ে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শ্রমিক-মালিক পক্ষের মধ্যে এমনই ঠান্ডা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল কামারহাটির ইন্ডিয়া ফয়েল্‌স কারখানায়। তবে শেষ পর্যন্ত ফলাফল ‘ড্র’। কেননা, অন্ধকার নামতেই রণে ভঙ্গ দিয়েছেন দু’পক্ষ।

কিন্তু এই প্রতিযোগিতার কারণ কি?

কারখানা সূত্রে খবর, বছরখানেক আগে ৫০ জন শ্রমিককে ইন্ডিয়া ফয়েল্‌স-এর দমন শাখায় বদলির সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে প্রথম থেকেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছিল। এর পরে কিছু শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন অবশ্য কর্তৃপক্ষের বদলির সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁরাই কয়েক মাসের বকেয়া বেতন প্রদান এব‌ং দমনে বদলির প্রতিবাদে কারখানার গেটের সামনে বিক্ষোভ সভা শুরু করেন। সভার জন্য চোঙা লাগানো হয় কারখানার ভিতরের দিকে মু‌খ করে।

এত পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও, বেলা বাড়তেই কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত পড়ে। কারণ এ দিনই কামারহাটির ওই কারখানার আধুনিকীকরণের জন্য বিদেশী পুঁজিপতিদের পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। আর বৈঠকের সময়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কানে গেলে ক্ষুব্ধ হতে পারেন ওই পুঁজিপতিরা। এই আশঙ্কা করেই পাল্টা চোঙা লাগানোর ব্যবস্থা করেন কারখানা-কর্তৃপক্ষও। সেই মতো বিক্ষোভকারীদের সভাস্থলের দিকে মুখ করে লাগানো হয় আর একটি চোঙা। ইন্ডিয়া ফয়েল্‌স-এর কামারহাটি শাখার প্রধান অলোক দাস বলেন, ‘‘পুঁজিপতিরা এলে যাতে অসুবিধা না হয়, তাই তাঁদের মন অন্য দিকে ঘোরাতে গান বাজানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। জিজ্ঞাসা করলে বলতাম সামনে স্বাধীনতা দিবস, তাই গান চলছে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের পক্ষে অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরাও কারখানার উন্নতি চাই। কেউ এলে তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য সভা করিনি। ন্যায্য দাবি জানাতেই এই সভা।’’

কিন্তু এত কিছু আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত কামরাহাটির ওই কারখানায় আজ আর কোনও বিদেশি পুঁজিপতি আসেননি। অলোকবাবু জানান, গত বুধবার ওই পুঁজিপতিরা এ রাজ্যে এসেছেন। ওই দিনই তাঁদের ইন্ডিয়া ফয়েল্‌স-এর পাণ্ডুয়া শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কামারহাটিতে আসার কথা থাকলেও এ দিন তাঁরা আর আসেননি।

কারখানায় সমস্যা কি নিয়ে? কর্তৃপক্ষ বদলির নির্দেশ জারি করার পরেই প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল কারখানার তৃণমূল-সিটু দুই শ্রমিক সংগঠনই। জেলা, স্থানীয় স্তরের নেতারাও প্রতিবাদে নামেন। জেলা শ্রম দফতরে বিষয়টি নিয়ে কয়েক বার বৈঠকও হয়। এর পরে ২০ জন শ্রমিক স্বেচ্ছাবসর নিয়ে পাওনাগণ্ডা বুজে নেন বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। অলোকবাবু বলেন, ‘‘কারখানাটির আধুনিকীকরণের জন্য মালিক সব রকম চেষ্টা করছেন। ৫ জন শ্রমিক দমনে যেতে রাজিও হয়েছেন। কিন্তু বাকি ২৫ জন এই সব গণ্ডগোল করছেন।’’ যদিও অলোকবাবুর কথা মানতে নারাজ কারখানার সিটু সংগঠনের এক সময়ের সহ-সভাপতি অমিতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল এবং সিটু, সব সংগঠনের নেতারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।
তাই আমরা নিজেরাই মদন মিত্রের নির্দেশে প্রতিবাদে নেমেছি। কর্তৃপক্ষ মিথ্যা দাবি করছেন।’’ এ কথা অস্বীকার করে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি তথা কাউন্সিলর বিমল সাহা বলেন, ‘‘মদন মিত্র কারখানার তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের চেয়ারম্যান। তিনি কখনই ওঁদের এই নির্দেশ দেননি। সুস্থ প্রতিবাদটা ওঁরা এ সব করে ভণ্ডুল করে দেবে।’’

কী বলছে শ্রমিক সংগঠন?

ইন্ডিয়া ফয়েল্‌স-এর তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক মলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জোট করব কেন? শ্রমমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন। তিনি মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষকে নিয়েই বৈঠক করবেন। তাই সংগঠনের সভাপতি সৌগত রায় এখন কারখানা চালু করে প্রতিবাদ করতে বলেছেন। তাই আমরা কোনও বিক্ষোভ সভার মধ্যে যাচ্ছি না।’’ সিটু সংগঠনের সম্পাদক তাপস ময়রা বলেন, ‘‘কারখানা চালু রেখে সুস্থ ভাবে শ্রমিকদের জন্য লড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জোট বাঁধার এই অভিযোগ কেন করা হচ্ছে বলতে পারবো না।’’

তবে যে যাই বলুন। দিনের শেষে কারখানা-কর্তৃপক্ষ কিন্তু হাঁফ ছেড়ে বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস আজ বিদেশি পুঁজিপতিরা আসেননি। এলে হয়তো এই বিক্ষোভ দেখে কতক্ষণে রাজ্য ছাড়বেন সেটাই ভাবতেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kamarhati factory Worker Agitation trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE