Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কৃষিঋণ অমিল, চাষে সমস্যা

৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে কেটে গিয়েছে এক মাস। কিন্তু বদলাচ্ছে না চাষিদের দুর্ভোগ। অন্যান্য বছর এই সময়ে চাষিদের কাজের চাপে দম ফেলার ফুরসত থাকত না।

ফাঁকা পড়ে রয়েছে জমি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ফাঁকা পড়ে রয়েছে জমি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪২
Share: Save:

৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে কেটে গিয়েছে এক মাস। কিন্তু বদলাচ্ছে না চাষিদের দুর্ভোগ।

অন্যান্য বছর এই সময়ে চাষিদের কাজের চাপে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। ভোরে থেকে শুরু হতো জমিতে বীজ পোঁতার কাজ। কিন্তু এ বার ছবিটা প্রায় উল্টো। এখনও পর্যন্ত বেশির ভাগ চাষের জমি প্রায় ফাঁকা পড়ে রয়েছে। চাষিরা ঘুরছেন ব্যাঙ্ক এবং কৃষি সমবায় সমিতির দরজায় দরজায়। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ব্লকের পুরন্দরপুর, তেঁতুলবেড়িয়া, বেড়ি, পিপলি, সুবিদপুর, গড়জলা, শশাডাঙা, কালাঞ্চি-সহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিদের অবস্থা এমনই।

এমনিতেই জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির কারণে জলের তলায় থাকে গাইঘাটা ব্লকের বেশির ভাগ কৃষি জমি। মূলত নভেম্বরের শেষ থেকে সেখানে আলু, সর্ষে, ওল, কুমড়ো-সহ কিছু সব্জির চাষ শুরু হয়। চাষের খরচের জন্য চাষিদের ভরসা কৃষি ঋণ। মূলত ব্যাঙ্ক এবং কৃষি সমবায় সমিতিগুলি থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কৃষি ঋণ মিলত। কিন্তু এ বার নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্ক এবং কৃষি সমবায় সমিতিগুলি থেকে পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ মিলছে না। ব্যাঙ্ক এবং কৃষি সমবায় সমিতির কর্তাদের দাবি, যে রকম টাকা আসছে সে রকমই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়েকজন চাষি চড়া সুদে মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করছেন। কিন্তু নগদে টান থাকায় মহাজনেরাও বেশি টাকা ঋণ দিতে চাইছেন না। ফলে অনেক চাষিই এই মরসুমে জমিতে চাষ করেননি। সুবিদপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য প্রমথ বর্মন নিজেও চাষবাস করেন। এর আগে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কের পুরনো ঋণ শোধ করে দিয়েছি। কিন্তু নতুন করে ঋণ দরকার হলেও ব্যাঙ্ক তা দিচ্ছে না। ফলে চাষ শুরু করতে পারিনি।’’ গড়জলার বাসিন্দা অশোক মণ্ডলের দশ বিঘে জমি রয়েছে। কিন্তু ঋণ না পাওয়ায় সেখানে তিনি এ বার চাষ করতে পারেননি। রামনগর পঞ্চায়েতের সদস্য বাসুদেব ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় প্রায় চার হাজার চাষি ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ পাননি। আমি নিজেও কৃষি ঋণ না পাওয়ায় আমার তেরো বিঘে জমিতে চাষ করতে পারিনি।’

একে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও ঠান্ডা পড়েনি। যেটুকু জমিতে চাষ হয়েছে, তাঁরাও ফসলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তার উপরে চাষের কাজে হাতই লাগাতে পারেননি অনেকে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ফলন মার খাবে। যার জেরে আখেরে সব্জি-আনাজের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে উঠতে চলেছে আগামী মাসগুলিতে, এমন আশঙ্কাও দানা বাঁধছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agricultural credit cultivation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE