Advertisement
E-Paper

মাস পয়লাতেই টাকার জোগান দিতে হিমশিম খেল ব্যাঙ্কগুলি

প্রয়োজন ছিল কুড়ি হাজার। পেলেন মাত্র ছয়। তা নিয়েই বাড়ি ফিরলেন কাকদ্বীপের বাসিন্দা গণেশচন্দ্র মণ্ডল। তিনি শ্রীনগর পঞ্চায়েতের কমলপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২০
ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

প্রয়োজন ছিল কুড়ি হাজার। পেলেন মাত্র ছয়। তা নিয়েই বাড়ি ফিরলেন কাকদ্বীপের বাসিন্দা গণেশচন্দ্র মণ্ডল। তিনি শ্রীনগর পঞ্চায়েতের কমলপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

স্কুল বাদ দিয়ে মাস মাইনে তুলতে আসতে হচ্ছে তাঁকে গত তিন দিন ধরে। এ ভাবে, স্কুল কামাই করা সম্ভব নয়। এ দিকে, ব্যাঙ্কে না এলে সংসার খরচও চলবে না। একই অবস্থা ওই স্কুলের আরও এক শিক্ষক আব্দুল খলিল শেখেরও। মাস পয়লার প্রথম দিনেই এই সমস্যায় পড়লেন বেতন অ্যাকাউন্ট এবং পেনশন প্রাপকেরা। একাধিক ব্যাঙ্কের ম্যানেজারদের দাবি, টাকা না এলে তাঁদের পক্ষে বেশি টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। টাকা মেলেনি কাকদ্বীপ সাব পোস্টঅফিস-সহ অন্য পোস্ট অফিসগুলিতেও।

কাকদ্বীপ স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে বেশ কিছু প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিন্তু বেতনের টাকা তুলতে এসে প্রথম দিনই হোঁচট খেলেন তাঁরা। বাইরে নোটিস ঝুলিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে, বেতন অ্যাকাউন্ট থেকে বৃহস্পতিবার তোলা যাবে মাত্র সাড়ে ছয় হাজার টাকা।

গণেশবাবু বলেন, ‘‘ফের কাল আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু রোজ রোজ এখানে এসে লাইন দেওয়া কী সম্ভব? এই ক’টা টাকায় ক’দিনই বা সংসার চলবে। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ডের কাছে আরও একটি ব্যাঙ্কে পেনশন তুলতে এসেছিলেন দুর্বাচটির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক বাণেশ্বর দাস। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর তাঁকে ব্যাঙ্ক থেকে বলা হয়েছে, ‘‘পর্যাপ্ত টাকা না থাকার কারণে ১০ হাজার টাকার বেশি তাঁকে দেওয়া হবে না।’’ বাণেশ্বরবাবুর কথায়, ‘‘শরীর খারাপ। এত দূর থেকে বার বার এসে ব্যাঙ্কে টাকা তোলা সম্ভব নয়। আবার পরে চেষ্টা করতে হবে। সব কিছু আটকে যাবে। কারণ এই সামান্য টাকায় চলবে না।’’

কিন্তু মাসের প্রথম দিনেই যদি এই হাল হয়, তা হলে অন্য দিন কী হবে? এই আশঙ্কাতেই এখন গোটা রাজ্য। এক ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, ‘‘টাকা নেই। এটিএম চালাতে পারছি না বেশিক্ষণ। তারপর সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে টাকা সরিয়ে স্যালারি এবং পেনশনের জন্য রাখত হচ্ছে। আমাদের অধীনে থাকা শাখা ব্যাঙ্কগুলিকেও পর্যাপ্ত টাকা দিতে পারছি না।’’ ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানান, ‘‘টাকার সমস্যা এই সপ্তাহে না মিটলে কাল থেকে আরও সমস্যা হবে। কারণ সাধারণ মানুষ কিন্তু অনেকটাই সহ্য করছেন।’’

এ দিন কাকদ্বীপ সাব পোস্ট অফিসেও মেলেনি টাকা। বুধবার যা টাকা এসেছিল তা দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত চলেছে। এ বার পোস্ট অফিসে নগদ টাকার বদলে দেওয়া হয়েছে ড্রাফ্‌ট। অন্য একটি ব্যাঙ্ক থেকে তা ভাঙিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই ব্যাঙ্কও টাকা না থাকার কারণে দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় শুক্রবার পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে সমস্যা হবে বলে জানিয়েছেন পোস্ট অফিসের এক কর্তা।

বসিরহাটের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন ছিল। তবে বেশির ভাগ এটিএম কাউন্টারে কোনও টাকা ছিল না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জনতা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যেখানে আরবিআই থেকে বলা হচ্ছে সব ব্যাঙ্ক এবং এটিএমে পর্যাপ্ত টাকা পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি এটিএমে টাকা থাকলেও সেখান থেকে ২ হাজার টাকার নোটই মিলছে। যা পেয়ে ভাঙাতে মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সহ প্রতিবেদন: নির্মল বসু।

money crisis Banks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy