শোকার্ত: সফিয়ারের পরিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ
এলাকায় তাঁর দাপটের কথা জানে সকলে। নিজের স্ত্রী রুপজানকেও সোনাটিকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে ভোটে দাঁড় করিয়েছিলেন শাসনের তৃণমূল নেতা সফিয়ার রহমান।
দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, রূপজানের বিরুদ্ধে নির্দল হিসাবে একজন মনোনয়ন দিয়েছিলেন। সফিয়ার তাঁকে ধমকে বলেছিলেন, ‘‘ভাবিজান দাঁড়িয়েছে যেখানে, সেই আসনে আবার ভোটে লড়ছিস কেন?’’
সেই প্রার্থী মিনমিন করে বলতে চেয়েছিলেন, ভোটে দাঁড়াতে হাজার দু’য়েক বেরিয়ে গিয়েছে পকেট থেকে। সফিয়ার তাঁর হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে বলেন, ‘‘নে, আর কথা বাড়াস না।’’
শাসনের ফলতি-বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েতে এ বার প্রার্থী বাছাইয়ে সফিয়ারই ছিলেন শেষ কথা, বলছেন দলের অনেকেই। তাঁর দাপটেই প়ঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে অন্য কোনও দল প্রার্থীই দিতে পারেনি। যে ৩টিতে মাত্র অন্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় করছেন, তাঁরাও ‘নির্দল’ হিসাবে।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত দখল হাতে চলে এসেছে মনে করেই বুধবার এলাকায় শুরু হয়েছিল বিজয় উৎসব। সেই মিছিলেই হামলা চলে সফিয়ারের উপরে। মারা যান তৃণমূল নেতা। পাল্টা মারে মৃত্যু হয় আততায়ী রজব আলিরও।
পঞ্চায়েত ভোটে সফিয়ারের দাপট দেখে দলের অন্য গোষ্ঠী খেপেছিল, দলের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে সে কথা। রুপজানও একই অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দলে আমার স্বামীর উত্থান কেউ কেউ মেনে নিতে পারছিল না। তাই ওকে তৃণমূলের লোকেরাই খুন করেছে।’’
শাসন-খড়িবাড়ি এলাকায় ভেড়ির কাঁচা টাকার বখরা নিয়ে খুন-জখমের ইতিহাস দীর্ঘ। বাম আমলেও দলীয় কোন্দল ছিল চূড়ান্ত। তার সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে বিদ্যাধরীর মাটি টাকার টাকা, কৃষিজমি থেকে কাটা মাটির টাকার বখরা। ইটভাটায় মাটি সরবরাহের কারবার নিয়েও চলে রেষারেষি। এ সব নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও নতুন নয়। এ সব নিয়েই আবর্তিত হয় শাসনের রাজনীতি। অভিযোগ, সে সব কারণেও অন্য গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়েছিলেন সফিয়ার।
ইলেকট্রিকের দোকান ছিল এক সময়ে সফিয়ারের। সেখান থেকে তাঁর এ হেন উত্থান মেনে নিতে পারেনি দলেরই অনেকে। রুপজান বলেন, ‘‘রাজনীতিতে উপরে উঠলে শত্রু তো হবেই। ছক কষে দলের কিছু লোকই স্বামীকে খুন করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy