Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বিজেপির এ বার অগ্নিপরীক্ষা বসিরহাট মহকুমার দুটি পুরসভায়

বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের ফলাফলে ওই বিধানসভার অন্তর্গত টাকি-বসিরহাট পুরসভায় বেশির ভাগ ওয়ার্ডে এগিয়ে আছে বিজেপি। জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। যা তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ তো বটেই। তবে তৃণমূলের সামনে দু’টি অস্ত্র। গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড এলাকায় চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন করতে পেরেছে বলে মানেন বহু নাগরিক। বিশেষত, টাকির ক্ষেত্রে গোটা শহরকে ঝাঁ চকচকে আলোয় মুড়ে, পর্যটনের উন্নতি করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে তারা। উন্নয়নের অস্ত্রে বিরোধীদের কাত করা যাবে বলে মনে করেন বিদায়ী পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

বসিরহাটে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শমীক ভট্টাচার্যের অবরোধ। বৃহস্পতিবার নির্মল বসুর তোলা ছবি।

বসিরহাটে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শমীক ভট্টাচার্যের অবরোধ। বৃহস্পতিবার নির্মল বসুর তোলা ছবি।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৮
Share: Save:

বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের ফলাফলে ওই বিধানসভার অন্তর্গত টাকি-বসিরহাট পুরসভায় বেশির ভাগ ওয়ার্ডে এগিয়ে আছে বিজেপি। জয়ী হয়েছিলেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। যা তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ তো বটেই।

তবে তৃণমূলের সামনে দু’টি অস্ত্র। গত পাঁচ বছরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড এলাকায় চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন করতে পেরেছে বলে মানেন বহু নাগরিক। বিশেষত, টাকির ক্ষেত্রে গোটা শহরকে ঝাঁ চকচকে আলোয় মুড়ে, পর্যটনের উন্নতি করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে তারা। উন্নয়নের অস্ত্রে বিরোধীদের কাত করা যাবে বলে মনে করেন বিদায়ী পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

এ ছাড়া, বিধানসভা ভোটে জয়ী হলেও গত সাত মাসে বিজেপি এখানে তেমন মজবুত সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি। পুরভোটের প্রচারের জাঁকজমকেও তৃণমূল টেক্কা দিয়েছে তাদের। যদিও বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এখানে সন্ত্রাস করে ভোট করতে চাইছে ওরা। উন্নয়ন যতটা দেখা যাচ্ছে, একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ওয়ার্ডের ভিতরে ভিতরে এখনও সে সব কিছুই হয়নি। রাস্তা, পানীয় জল, নিকাশি নিয়ে ক্ষোভ আছে বহু মানুষের।’’

সাংগঠনিক কোনও দুর্বলতার কথাও মানতে চাননি তিনি। বরং তাঁর দাবি, কয়েক মাস মাত্র আগে জয়ী হয়ে তিনি নিজের বিধায়ক কোটার বহু নানা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করেছেন এখানে।

সোমনাথবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘দু’একটি রাস্তা হয় তো ঠিক হয়নি এখনও। তবে বেশির ভাগই সংস্কার হয়ে গিয়েছে। পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যার কথা মানেন তিনি। তবে জয়ী হয়ে এলে আগামী দিনে এ সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দেন সোমনাথবাবু।

সিপিএমের পাঁচ বারের পুরপ্রধান দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার পুরভোটে লড়ছেন সোমনাথবাবুর মুখোমুখি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন কাজের নামে দুর্নীতি চলছে। উন্নয়নের ধারা শুরু হয়েছিল বাম আমলে। সেই অগ্রগতিকে কিছু এগিয়ে নিয়ে গেলেও স্বজনপোষণ এবং আর্থিক দুর্নীতি চলছে।’’

বসিরহাট শহরও গত কয়েক বছরে বেশ ঝাঁ চকচকে হয়েছে। সুদৃশ্য বাড়ি, ফ্ল্যাট, বড় বড় দোকানপাট, দামি দামি গাড়ি— কী নেই! কিন্তু এই বৈভবের পিছনে চোরাচালান, গরুপাচারের টাকা উড়ছে বলেও কানাঘুষো শোনা যায়। সেই সঙ্গে মেছোভেড়ি, ইটভাটার ব্যবসার টাকাও আছে বহু লোকের হাতে। যে কারণে পুরভোটেও এক এক জন প্রার্থীর খরচের বহর দেখলে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হবে।

বিজেপির অন্দরে এখানে প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভ আছে। যদিও শমীকবাবু বলেন, ‘‘শাসক দল যদি গুন্ডামি-মস্তানি না করে, তা হলে আমরা বোর্ড গড়ছি এখানে।’’ বিধায়ক হওয়ার পরে বসিরহাটের উন্নয়নের জন্য তিনি বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে জানালেন। গরু পাচার বন্ধ হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। যদিও বিধানসভা ভোটে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের দীপেন্দু বিশ্বাসের দাবি, মাত্র কয়েক মাস ক্ষমতায় এসে বসিরহাটে একের পর এক উন্নয়ন তাঁরাই করেছেন। জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা, আলো, পানীয় জল— কাজ হয়েছে বহুমুখী। আধুনিক মোটেল তৈরি হচ্ছে। পুরবোর্ড গড়ার লক্ষে তাঁরাই এগিয়ে আছেন বলে দাবি দীপেন্দুর। সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা আবার বলেন, ‘‘শাসক দলের হয়ে ভোট করতে যে ভাবে বহিরাগতদের আনা হয়েছে, তা দেখতেই পাচ্ছেন মানুষ। শুধু উন্নয়নের জোরে ভোট করলে এ সব করতে হত না ওদের।’’ সুষ্ঠু ভাবে ভোট হবে কিনা, তাঁরা এই আশঙ্কায় আছেন বলে জানিয়েছেন নিরঞ্জনবাবু। দীর্ঘ দিন এই পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামেরাই। নারায়ণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন দীর্ঘ দিনের বিধায়ক তথা পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু বামেদের সেই সাংগঠনিক জোর এখন নেই। বাম আমলে পুরসভা কী কী কাজ করেছিল, তার ফিরিস্তি দিয়েই এবং বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রচারে যাচ্ছে তারা।

কংগ্রেস এই এলাকায় এক সময়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। তার উপরে অসিত মজুমদারকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় ভাই অমিত মজুমদারকে জেলা কংগ্রেস সভাপতির (গ্রামীণ) দায়িত্বে এনেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। শেষ মুহূর্তে কোনও অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকার হতে হবে কিনা তাঁদের প্রার্থীদের, তা নিয়ে চিন্তা আছে দলের অন্দরেও। অমিতবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং পুলিশ যদি ভোট করতে দেয়, তা হলে এখানে কংগ্রেস ভাল ফল করবে।’’ বোর্ড গ়ড়ার লক্ষে তাঁরাই এগিয়ে, এই দাবি করে দীপেন্দু বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকেও বাম-কংগ্রেস উন্নয়ন করতে না পেরে কুৎসার পথে নেমেছে। তাদের জুড়ি হয়ে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে বিজেপি।’’

২০১৬ সালে পুরভোটের আগে টাকি-বসিরহাটে ভোটে ভাল ফল করতে মরিয়া বিজেপি। তবে শেষমেষ কী হয়, তা বলে জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর কয়েকটা মাত্র দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE