Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ওয়ার্ডে উন্নয়নের কৃতিত্ব কার, জোর কাজিয়া

এলাকার উন্নয়নের কাণ্ডারী কে? পুর ভোটের প্রচারে এখন এই বিষয় নিয়েই রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি তাঁরাই এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। কারণ, এটি কামারহাটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তমাল দে-র ওয়ার্ড।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫০
Share: Save:

এলাকার উন্নয়নের কাণ্ডারী কে?

পুর ভোটের প্রচারে এখন এই বিষয় নিয়েই রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি তাঁরাই এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। কারণ, এটি কামারহাটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তমাল দে-র ওয়ার্ড। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তমালবাবু নন, এলাকার যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার কৃতিত্ব মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্রের।

তবে রাজনৈতিক তরজা যাই থাকুক না কেন, কামারহাটি পুরসভার এক সময়ের সিপিএমের চেয়ারম্যানের ওয়ার্ডের হাল যে খুব একটা ভাল তা নয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি, পানীয় জল, জঞ্জাল সাফাই, রাস্তাঘাট সব কিছুতেই কমবেশি সমস্যা রয়েছে। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর তথা প্রার্থী তমাল দে। তিনি বলেন, ‘‘সবই বিরোধীদের রটনা।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের তমাল দে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ২০১০ সালে পুরভোটে কামারহাটিতে জয়ী হয়েছিল বামফ্রন্ট। তখন এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে টানা সাড়ে তিন বছর ধরে তমালবাবুই কামারহাটির পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৪-এর জানুয়ারিতে এক জন সিপিএম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বদলে যায় চিত্রটি। কামারহাটি পুরসভা চলে যায় তৃণমূলের দখলে। এর ফলে শেষ দেড় বছর ধরে তমালবাবু কামারহাটির বিরোধী দলের কাউন্সিলর।

বতর্মান শাসক দল তৃণমূল থেকে শুরু করে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, টানা সাড়ে তিন বছর চেয়ারম্যান থাকলেও এলাকার উন্নয়নে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেননি তমালবাবু। ফলে কামারহাটির এই ওয়ার্ডের নাগরিক পরিষেবার অবস্থা খারাপ। আর এই বিষয়কেই ঢাল করে আসন্ন পুরভোট লড়তে চলেছে তৃণমূল। এ বারে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন কামারহাটির শ্রমিক নেতা বলে পরিচিত বিমল সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘শেষ দেড় বছর পুরসভায় ক্ষমতায় এসে যতটা সম্ভব কাজ করা হয়েছে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে তমালবাবু উন্নয়নের কী কাজ করেছেন তা নিয়ে বাসিন্দারাই প্রশ্ন তুলছেন। এখনও তো উনিই কাউন্সিলর, তাও কোনও কাজ করেননি।’’

শেষ দেড় বছর ধরে কামারহাটির চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আগের চেয়ারম্যান তাঁর নিজের এলাকার উন্নয়নে কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন বলে জানা নেই। আমাদের বিধায়ক তথা মন্ত্রী মদন মিত্র উদ্যোগী হয়ে ওই ওয়ার্ডের উন্নয়নের কিছু কাজ করেছেন।’’ গোপালবাবুর দাবি, এলাকার পুকুরগুলির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। মন্ত্রী মৎস্য দফতর থেকে অনুদান নিয়ে এসে সেই পুকুরগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছেন। তমালবাবু অবশ্য কৃতিত্বের ভাগ কাউকে দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, ‘‘এলাকায় কোনও সমস্যাই নেই। নিকাশি থেকে পানীয় জল সমস্ত উন্নয়নের কাজ করে দিয়েছি।’’

কিন্তু তমালবাবুর কথায় সহমত নন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বও। নাগরিক পরিষেবা নিয়ে সিপিএম ও তৃণমূল দুই দলের দিকেই তাঁরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শম্ভু সাহা বলেন, ‘‘টানা কয়েক বছর চেয়ারম্যান থেকেও তমালবাবু কোনও কাজ করেননি। শেষ দেড় বছরে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু তাঁরাও কোনও কাজ করেনি।’’ যদিও বিমলবাবু কিংবা গোপালবাবুর অভিযোগ, এলাকার কাউন্সিলরই কাজে উদ্যোগী নন। তাই এলাকায় কিছু সমস্যা থেকেই গিয়েছে।

কামারহাটি এলাকায় সিইএসসি দফতরের পিছনেই রয়েছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় কলোনি, বার্মা কলোনি, টিচার্স কলোনি, পাঞ্জা ভিলা এলাকা নিয়েই তৈরি এই ওয়ার্ড। বাঙালি ভাষাভাষীর পাশাপাশি রয়েছেন দক্ষিণ ভারতীয়রাও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় এখনও বৃষ্টি হলেই জল জমে। নিকাশির অবস্থা বেহাল। নর্দমাগুলি বুজে রয়েছে। বিভিন্ন রাস্তাতেই আবর্জনা জমে থাকে। এলাকার প্রধান রাস্তা নীলগঞ্জ রোডের অবস্থাও মন্দের ভাল। এলাকার মধ্যে খাটাল চললেও কোনও প্রশাসনই ব্যবস্থা নেয়নি। বাসিন্দাদের সমস্ত অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ মেলে এলাকায় চক্কর মারলেই।

এই সমস্ত বিষয়কেই হাতিয়ার করে এ বার প্রচারে নেমেছেন বিমলবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘চেয়ারম্যান থেকেও তমালবাবু যে ভাবে নিজের এলাকাকে বঞ্চিত করেছেন সেটাই আমার প্রচারের মূল হাতিয়ার। মানুষ বুঝে গিয়েছেন সিপিএম কী কাজ করেছে। তাই আমাদের জয় নিশ্চিত।’’ বিমলবাবুর কথাকে বিশেষ আমল দিতে চান না প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘এ সব বলে আমাকে এলাকাবাসীর কাছে খারাপ করা যাবে না। সবাই আমাকে চেনেন, জানেন।
কে কাজ করেছেন তাও সবার জানা। তাই অবাধ ভোট হলে মানুষ আমাকেই জয়ী করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE