Advertisement
০৯ মে ২০২৪

সাপের কামড়ে মৃত্যু-হীন ব্লক হতে চলেছে ক্যানিং ১

সম্প্রতি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওই কথা ঘোষণা করেন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরে সাপের কামড়ে মৃত্যু রুখতে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

‘সাপের কামড়ে মৃত্যু-হীন ব্লক’ হিসাবে ঘোষণা করা হল ক্যানিং ১ ব্লককে।

সম্প্রতি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওই কথা ঘোষণা করেন জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরে সাপের কামড়ে মৃত্যু রুখতে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে। ওঝা-গুনিন নয়, সাপের কামড়ে সঠিক চিকিৎসা হয় হাসপাতালেই— এ কথা বার বার বলে আসছে তারা। ক্যানিং হাসপাতালকে সাপের কামড়ে সঠিক চিকিৎসার ‘মডেল হাসপাতাল’ করেও গড়ে তোলা হয়েছে।

মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর ও যুক্তিবাদী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে ক্যানিং ১ ব্লকে মোট সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ১০২৪। এর মধ্যে বিষহীন সাপের কামড় ছিল ৯৪১। বিষধর সাপের কামড় ছিল ৮৩। মৃত্যু হয় ৬ জনের। ২০১৬ সালে মোট সাপের কামড় ছিল ৯৮২। বিষহীন সাপের কামড় ছিল ৮৭২। বিষধর সাপের কামড় ছিল ৯০। মৃত্যু হয় ৪ জনের। ২০১৭ সালে মোট সাপের কামড় ছিল ১১৯৮। বিষধর সাপের কামড় ছিল ৯৩ জনের ক্ষেত্রে। কিন্তু কেউ মারা যাননি।

কী ভাবে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হল, প্রশ্ন করলে যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। সেই মতো ক্যানিং ১ ব্লককে ‘সাপের কামড়ে মৃত্যু-হীন মডেল ব্লক’ হিসাবে গড়ে তুলতে প্রথমে বেছে নিয়ে কাজ শুরু করা হয়।’’ গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং ১ এবং ২ ব্লক-সহ প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মানুষ তথা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সাপে কামড়ালে ওঝা-গুনিনের কাছেই যেতে হবে। এই সব এলাকায় মূলত কালাচ, কেউটে ও চন্দ্রবোড়া সাপের আনাগোনা আছে। এর মধ্যে কালাচ সাপ রাতের অন্ধকারে ঘুমের মধ্যে কামড়ায়। কালাচ সাপের ফণা নেই এবং এই সাপ ছোবল মারলে জ্বালা-যন্ত্রণা তেমন থাকে না। ফলে কিছু কামড়েছে কিনা, বুঝতে বুঝতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। কালাচ ও কেউটে সাপের ছোবলে নিউরোটক্সিস বিষ থাকে। এই সাপ কামড়ালে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ঝিমুনি ভাব আসে, মাথা ভার হয়, বমিবমি ভাব থাকে। অনেক সময়ে কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসে। চন্দ্রবোড়া সাপের ছোবলে থাকে হেমাটোটক্সিস বিষ। এই সাপ কামড়ালে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। শরীর ফুলতে শুরু করে। রক্তের কোষ ভেঙে গিয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। কিডনি অকেজো হয়ে যায়।

কী সাপ কামড়েছে, তা সচরাচর বুঝতেই পারেন না মানুষজন। এই সব বিষধর সাপ কামড়ালে সাধারণত একটি বা দু’টি দাঁতের দাগ থাকে। বিষহীন সাপ কামড়ালে সাধারণত অর্ধচন্দ্রাকৃতি ভাবে অনেকগুলি দাঁতের দাগ থাকে। সাপে ছোবল মারলে কাউকে এক জায়গায় শুইয়ে রেখে তার ক্ষতস্থান ক্ষার জাতীয় সাবানের গুঁড়ো দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও জরুরি।

•২০১৫ সালে ক্যানিং ১ ব্লকে সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ১০২৪। মারা যান ৬ জন

•২০১৬ সালে সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ৯৮২। মারা যান ৪ জন

•২০১৭ সালে সাপের কামড়ের সংখ্যা ছিল ১১৯৮। কেউ মারা যাননি।

এ দিন এই অনুষ্ঠানে যুক্তিবাদী সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সাপে কামড়ানো রোগীকে এভিএস দেওয়ার পরে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রশিক্ষিত কাউকে নিয়োগ করা দরকার। দেখা দরকার, শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করছে কিনা। শ্বাসকষ্ট আছে কিনা। শরীর ফুলে যাচ্ছে কিনা, মুখ দিয়ে অনবরত লালা বেরোচ্ছে কিনা। এ ধরনের আরও কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায়, এভিএস কতটা কাজ করছে। এ ভাবেই মৃত্যু আটকানো সম্ভব। ক্যানিং হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর জীবন রক্ষার জন্য ভেন্টিলেশন ও ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদনও করা হয়।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৭ সালে ক্যানিং ১ ব্লকে একটিও সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা হয়নি। আমরা ক্যানিং ১ ব্লককে মডেল করে আরও প্রচার করব। অন্য ব্লকেও সাপের ছোবলে মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE