Advertisement
E-Paper

খোলা আকাশের নীচেই চলছে ক্লাস

সরকারি টাকায় মাটির স্কুল ঘর পাকা করার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোথাও টাকা এসে পড়ে রয়েছে, কোথাও বা বাকি টাকার অভাবে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ। এর দায় একে অন্যের উপরে চাপাতে ব্যস্ত বিভিন্ন দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:২০
শিক্ষা: দেগঙ্গায় তোলা সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

শিক্ষা: দেগঙ্গায় তোলা সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।

সরকারি টাকায় মাটির স্কুল ঘর পাকা করার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোথাও টাকা এসে পড়ে রয়েছে, কোথাও বা বাকি টাকার অভাবে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ। এর দায় একে অন্যের উপরে চাপাতে ব্যস্ত বিভিন্ন দফতর। আর এই টানাপড়েনের মধ্যেই কেটে গিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। বাধ্য হয়েই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েকশো খুদে পড়ুয়াকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে বাঁশ গাছের নীচে খোলা জায়গায়। একটি দু’টি নয়, এমন হাল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার ৭টি অঙ্গনওয়াড়ি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের।

নুরনগর পঞ্চায়েতের খেজুরডাঙা গ্রামের খালপাড় অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষাকেন্দ্রটির কথাই ধরা যাক। ২০১১ সালে সংখ্যালঘু উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ৬ লক্ষ টাকায় অঙ্গনওয়াড়ি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র তৈরির অনুমোদন মেলে। ২০১২ সালে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরের বছরেই তা মাঝপথে থেমে যায়। এখন আম-বাঁশ গাছের নীচে চলছে পঠন পাঠনের কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুল্লা মণ্ডল বলেন, ‘‘খেজুরডাঙা ছাড়াও উত্তরপাড়া, খালপাড়পাড়া, জোলপাড়পাড়া ও পদ্মার ধারপাড়ার শ’খানেক পড়ুয়া খুবই সমস্যার মধ্যে পড়াশোনা চালাচ্ছে। মাথার উপরে ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি পড়লে পড়ুয়ারা ছুট লাগায় বাড়ির পথে।’’ অভিভাবক তাজমিরা বিবি বলেন, ‘‘বাঁশ গাছের পাতা বই-খাতার উপরে এসে পড়ে। মাঝে মাঝে বাঁশ গাছ থেকে নানা পোকামাকড় বাচ্চাদের গায়ে এসে পড়ে। বাচ্চাদের গায়ে ঘা হয়ে যায়।’’ আনোয়ারা বিবি নামে আর এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘আশেপাশে আর কোনও স্কুল না থাকায় আমার ছেলেমেয়েকে এই স্কুলেই ভর্তি করেছি। খোলা জায়গায় রান্না হয়। খাবারে বিষক্রিয়া হতে পারে, এই ভয়ে অনেকে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পান না।’’

কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকা ফরিদা বিবি বলেন, ‘‘ভবন তৈরি হতে হতে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এক বাসিন্দার বাড়ির উঠোনে পঠন-পাঠন চলছে। খোলা জায়গায় পড়াশোনা হয় বলে বেশিরভাগ দিন অভিভাবকেরা বাচ্চাদের পাঠান না। আমরা কী করব?’’

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানালেন, ভবন তৈরির জন্য ৬ লক্ষ টাকার অনুমোদন মেলে। খালপাড় সংলগ্ন হওয়ায় মাটি ফেলার জন্য আরও আশি হাজার টাকা অনুমোদন হয়। প্রথম পর্যায়ে অনুমোদিত টাকায় কাজ শুরু হওয়ার পরে মাঝপাথে তা থেমে যায়। ভবন তৈরির বাকি কাজ শেষ করে পঠনপাঠন চালু করতে দু’তিনবার দেগঙ্গার বিডিও-র কাছে আবেদন জানিয়েও কাজ হয়নি।

দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সাবির হোসেন তরফদার বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন তহবিল থেকে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন মেলে। শুধু এই বিদ্যালয়টি নয়, টাকার অভাবে দেগঙ্গা ব্লকের ৭টি অঙ্গনওয়াড়ি বিদ্যালয়ের কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। বিষয়টি জেলা দফতরকে জানানো হয়েছে।’’

দেগঙ্গার বিডিও মনোজ কুমার জানান, যে ঠিকা সংস্থা ভবন তৈরির অনুমোদন পেয়েছিল, তারা মাঝপথে কাজ বন্ধ করে চলে যায়। ফলে নতুন করে আর দরপত্র ছাড়া যায়নি।’’

আর এ সবেরই মাসুল গুনতে হচ্ছে খুদে পড়ুয়াদের।

open sky Class
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy