মীন-ধরা: ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।
বুধাখালির আনজুয়ারা বেগমের পরিবারে সাত জন সদস্য। স্বামী সে রকম কিছু করেন না। বছরের অন্যান্য সময় টুকিটাকি কাজ করলেও তিন মাস চিংড়ির মীন বা চারা ধরেই চালায় ওই পরিবারটি।
কেবল ওই গৃহবধূ নয়, জেলার কয়েক হাজার মানুষ এই সময় এই কাজই করে। কিন্তু মাছের প্রজননের এই সময়ে মীন সংগ্রহের জেরে ইলিশ, পমফ্রেট সহ বিভিন্ন জলজ প্রজাতির ধ্বংসের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী পাড়ের ভাঙন। এই সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় বিকল্প ব্যবস্থা করতে নাজেহাল মৎস্য দফতর। যদিও মৎস্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মীন সংগ্রহকারীর হিসেব পাওয়া গিয়েছিল বছর দুয়েক আগে। সেই সময়ই একটা সমীক্ষায় রাজ্য মৎস্য দফতর দেখে, চিংড়ি মাছের মীন ধরতে গিয়ে ইলিশ, পমফ্রেট সহ প্রায় ৬৭ রকম প্রজাতির মাছ এবং জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। কারণ চিংড়ির মীন ধরতে গিয়ে সেগুলিও মশারি জালে আটকে মারা পড়ছে।
এই সময়ে মাছ, নদী মোহনা এবং সমুদ্রে মাছ ধরা বারণ। কিন্তু নামখানার বুধাখালি এবং নারায়ণপুর পঞ্চায়েতগুলি ঘুরে দেখা গেল, মুড়িগঙ্গার পূর্ব পাড়ে প্রবল ভাঙনে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে নদীর পাড় বরাবর চিংড়ির মীন (চারা) ধরা চলছে। জানা গেল, চৈত্র থেকে জৈষ্ঠ্য মাস চারা ধরার প্রক্রিয়া চলে। কেবল কাকদ্বীপ নয়, সাগর, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং, রায়দিঘি-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় এই তিন মাস অবাধে চলে মীন সংগ্রহের কাজ। আর্থিকভাবে একেবারে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলিই মূলত এই কাজ করে মাসে ৭-১০ হাজার টাকা আয় করে। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা, বিজন মাইতি, সতীনাথ পাত্ররা বলেন, ‘‘এই মৎস্যজীবীরা সংগঠিত ক্ষেত্রের মধ্যে পড়েন না। এ ভাবে মাছধরায় ইলিশ-সহ অন্যান্য মাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারকে এখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে যে সব মৎস্যজীবী সমুদ্রে মাছ ধরেন, তাঁদের বাঁচার উপায় থাকবে না।’’
এ ভাবে মীন ধরে সংগ্রহকারীরা যে সামান্য আয় করছেন তা থেকে সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশো গুণ বেশি বলেই দাবি করছেন সুভাষ দত্তের মতো পরিবেশবিদরা। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘চিংড়ি মাছের চারা ধরতে গিয়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি তো হচ্ছেই, একই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ জলের মধ্যে থাকায় মহিলাদের জননতন্ত্রেরও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার পরিবেশ আদালতে যা জানিয়েছে, তা একটা দায়সারা গোছের উত্তর। এর জন্য বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’’ জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পরিবেশ আদালতের কাছে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, এই সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মৎস্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই সমস্যা তাঁদের নজরে রয়েছে। গত বছর মাত্র সাড়ে চারশো পরিবারকে মাছ বিক্রির ভ্যান, একটি ওজনযন্ত্র দেওয়া গিয়েছিল মাত্র। দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে এ বছর বার তা আরও একটু বেশি সংখ্যায় দেওয়া শুরু হয়েছে। তারা নিজেরাই মানছেন, তা প্রায় কয়েকশো মানুষের মধ্যে এক টুকরো রুটি ছুড়ে দেওয়ার মতো। মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার কথায়, ‘‘আমরা বিকল্প জীবিকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে সামাজিক একটা প্রথা থেকে মানুষকে সরাতে সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy