Advertisement
২৭ মে ২০২৪
corona virus

ট্রাকের তলায় থাকতে হচ্ছে চালক খালাসিদের

তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের ভোমরায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘোজাডাঙায় আটকে পড়ে ট্রাক। একই কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা ট্রাকের চালক এবং খালাসিদেরও থাকতে হচ্ছে ঘোজাডাঙার বিভিন্ন পার্কিংয়ে।

এ ভাবে দিন কাটছে ওঁদের। —নিজস্ব চিত্র

এ ভাবে দিন কাটছে ওঁদের। —নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৫:৩৩
Share: Save:

কবে খুলবে সীমান্ত, কবেই বা বাড়ি পৌঁছে বাবা, মা, স্ত্রী-সন্তানদের মুখ দেখতে পারবেন তাঁরা— সেই চিন্তাতেই দিন কাটছে বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে আটকে থাকা ভারত এবং বাংলাদেশের দেড় হাজারের বেশি ট্রাকের চালক এবং খালাসিদের। তাঁদের ঠিকানা এখন ট্রাকের তলায় বা গাড়ির কেবিনে। সেখানেই রান্না করে খেয়ে রাত কাটাচ্ছেন সকলে।
২২ মার্চ পাথর, জিরে, পেঁয়াজ, লঙ্কা, হলুদ নিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওই ট্রাকগুলি এসেছিল বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে। তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের ভোমরায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘোজাডাঙায় আটকে পড়ে ট্রাক। একই কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা ট্রাকের চালক এবং খালাসিদেরও থাকতে হচ্ছে ঘোজাডাঙার বিভিন্ন পার্কিংয়ে। বসিরহাট ট্রাক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক খোকন গাজি বলেন, ‘‘দেড় হাজারের বেশি ট্রাক সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এ ভাবে দিনের পর দিন ৪০-৫০ টন মাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ট্রাকের টায়ার, ইঞ্জিন, ব্যাটারি-সহ অন্য যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি রাজস্ব-সহ মালিক, শ্রমিক সকলেই বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।’’
এক দিকে বাণিজ্য বন্ধ, তার উপরে মাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সরঞ্জাম মিলিয়ে বেশ কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিকল্প ব্যবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে সে বিষয়ে নবান্ন থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রসচিব, জেলাশাসক, মহকুমাশাসককে লিখিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। ঘোজাডাঙা ল্যান্ড পোর্ট সমন্বয় কমিটি গঠন করে বুধবার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ সভাও করেন।

বৃহস্পতিবার ঘোজাডাঙায় গিয়ে দেখা গেল, বিএসএফ জওয়ানেরা টহল দিচ্ছেন। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চালক-খালাসিদের কেউ ট্রাকের পাশে রান্নায় ব্যস্ত। কেউ তাস-লুডো খেলছেন। দিল্লির বাসিন্দা গফুর আলি বলেন, ‘‘জিরে নিয়ে গত ২২ মার্চ ঘোজাডাঙায় পৌঁছেছিলাম। কবে বাণিজ্য ফের চালু হবে, জানি না। লকডাউনে বাড়ির সকলে কী করছেন জানি না।’’ ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর নিয়ে আসা শ্যামল যাদব বলেন, ‘‘করোনার আতঙ্কে সকলে যখন ঘরবন্দি, সে সময়ে আমরা খোলা আকাশের নীচে রয়েছি। কাজ না থাকায় পরিবারকে কোনও সাহায্য করতে পারছি না।’’

বাংলাদেশের ঢাকা এবং যশোর থেকে আসা ট্রাক চালক সোলেমান গাজি, আতর গাজি, মির রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘তিন মাস হতে চলল বন্দরে আটকে রয়েছি। এখানে আমরা কী ভাবে রয়েছি, সে বিষয়ে দু’দেশের কেউই খোঁজ নিচ্ছেন না। বাড়ির লোকেরাই বা কেমন আছেন, তা-ও জানি না। এই পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকার ফলে অনেকেই মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ ঘোজাডাঙায় বাড়ি সন্তোষ দাস বলেন, ‘‘আমার এখানে সীমান্তে দু’শো শ্রমিক কাজ করেন। বন্দর বন্ধ হওয়ার পরে শুধু সরকারি চাল ছাড়া কিছুই মিলছে না। ফলে শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের এক রকম আধপেটা খেয়ে কোনও রকমে দিন কাটাতে হচ্ছে।’’ ঘোজাডাঙা ল্যান্ড পোর্ট সমন্বয় কমিটি সভাপতি কান্তি দত্ত বলেন, ‘‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সীমান্ত না খোলা হলে বড় আন্দোলনে নামা হবে।’’

এর আগে পেট্রাপোলে বাণিজ্য চালু করার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ। ঘোজাডাঙা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পেট্রাপোলে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ঘোজাডাঙাতেও যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

corona virus lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE