Advertisement
E-Paper

আমপানে ঘর অক্ষত, তবু মিলেছে ক্ষতিপূরণ

গোল বাধল আমপানের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হতেই। জানা গেল বিশ্বজিৎ তো বটেই, তাঁর বাবা এবং ভাইয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও ঢুকেছে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৩:৪৪
এমন বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন বিশ্বজিৎ মণ্ডল।  ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

এমন বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন বিশ্বজিৎ মণ্ডল। ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং সৌমেন মণ্ডল থাকেন হাবড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য হাড়িয়ায়। বিশ্বজিৎ পুরসভার অস্থায়ী কর্মী এবং তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য। সৌমেন ট্রেনে জিনিসপত্র ফিরি করেন। তিন মাস লকডাউনে তিনি বেকার। আমপানে সৌমেনের বাড়ির টিনের চাল উড়েছে, দেওয়াল ভেঙেছে। বিশ্বজিতের পাকাবাড়ি। সরকারি প্রকল্পে পাওয়া। আমপানে বিশেষ ক্ষতি হয়নি।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। গোল বাধল আমপানের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হতেই। জানা গেল বিশ্বজিৎ তো বটেই, তাঁর বাবা এবং ভাইয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও ঢুকেছে বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের টাকা। তারপর থেকেই এলাকায় শোরগোল শুরু হয়েছে। কারণ, প্রকৃত বহু ক্ষতিগ্রস্তই ক্ষতিপূরণ পাননি। চাপে পড়ে বিশ্বজিৎ টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

তাতে অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার বিশ্বজিৎ-সহ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ ডাকতে হয়। কয়েকজনকে আটক করা হলেও পরে অবশ্য থানা থেকে সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত অথচ টাকা পাননি, তালিকায় তাঁদের নাম ঢোকানো হবে।

সৌমেন জানান, ঝড়ে বাড়ির চাল উড়লেও একটি ত্রিপলও পাননি তিনি। উড়ে যাওয়া কয়েকটি টিন খুঁজে এনে কোনও রকমে ছাউনির ব্যবস্থা করেছেন। এলাকার বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডল, জগদীশ মজুমদারের বাড়িঘর ভাঙলেও ক্ষতিপূরণ জোটেনি তাঁদেরও।

বিশ্বজিৎ জানান, বৃহস্পতিবারই তিনি টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বাবা এবং ভাইও ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা রিনা রায়ের অভিযোগ, এলাকার কয়েকজন নেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও টাকা পেয়েছেন।

বিশ্বজিতের সাফাই, “ষড়যন্ত্র করে আমার পরিবারের তিনজনের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার বাড়ির ক্ষতি হয়নি। ওই টাকার আমার প্রয়োজনও ছিল না। তাই সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে দিয়েছি।” প্রশ্ন হল, কে ষড়যন্ত্র করে তাঁর নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেবে? তিনি নিজে পুরসভার কর্মী। কারও নাম ঢোকানোর যেটুকু সুবিধা তাঁর রয়েছে, বিরোধীদের সে সুবিধা কই? এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন এখন সেটাই।

এলাকার বিধায়ক তথা, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ভুল করে বা অন্য কোনও কারণে যদি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও কেউ যদি ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন, সেই টাকা ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাবড়া পুরসভার ১৩ বাসিন্দা টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।” হাবড়া পুরসভার প্রশাসক তথা বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাস বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও যাঁরা টাকা পাননি, তাঁদের বলা হয়েছে পুরসভায় এসে আবেদন করতে। খতিয়ে দেখে তালিকায় তাঁদের নাম তুলে দেওয়া হবে।”

সিপিএমের হাবড়া শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, “ক্ষতিপূরণ নিয়ে হাবড়া পুর এলাকায় তামাশা চলছে। পুর এলাকার বাসিন্দা নন, এমন লোকও ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।” বিজেপির জেলা নেতা বিপ্লব হালদারের অভিযোগ, “পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই শাসক দল দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ করেছে। পুরসভা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আমাদের দিচ্ছে না।”

জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, “আমাদের কেউ ক্ষতিপূরণ-দুর্নীতিতে যুক্ত থাকলে দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে। কারও পাশে দাঁড়াবে না। ক্ষতিগ্রস্তেরা যে দলই করুন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।”

Cyclone Amphan TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy