Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বাঁধের কাজে গতি নেই অল্প বৃষ্টিতেই ভাসছে গ্রাম

কেটে গিয়েছে সাত বছর। কিন্তু এখনও বসিরহাট মহকুমায় সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরুই হল না।

এখনও সন্দেশখালিতে নদীবাঁধের এই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।

এখনও সন্দেশখালিতে নদীবাঁধের এই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

কেটে গিয়েছে সাত বছর। কিন্তু এখনও বসিরহাট মহকুমায় সুন্দরবন লাগোয়া এলাকায় প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শুরুই হল না।

নদী বাঁধের ধারে মেছোভেড়ি হওয়ায় বাঁধের অবস্থা আরও শোচনীয় হচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই ওই এলাকায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকছে। ফলে ভাসছে গ্রাম। আর মানুষের ঠিকানা হচ্ছে ত্রাণ শিবির। ত্রাণ শিবিরেও সবার ঠাঁই হচ্ছে না বলে বাসিন্দারা জানান। ঝুপড়ি বানিয়ে কোনওরকমে মাথা গোঁজার জায়গা করে নিয়েছেন অনেকে। স্থানীয় বাসিন্দা কালীপদ মণ্ডল, রতন প্রামাণিকেরা বলেন, ‘‘বাঘের আক্রমণ যে কোনও সময় হতে পারে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই আমাদের এ ভাবে থাকতে হচ্ছে।’’

সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখে গিয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে সেখানে বাঁধ কেটে মেছোভেড়ি করা চলবে না। এতে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’

২০০৯ সালে আয়লায় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল ঘর, বাড়ি, গাছগাছালি। শতাধিক মানুষের মৃত্যুও হয়। বহু গবাদি পশু নিখোঁজ হয়েছিল। এই ঘটনায় বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জ এবং সন্দেশখালি ব্লকে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছিল। সাত বছর আগের এই ঘটনা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে এখনও টাটকা। কারণ ওই সমস্ত এলাকায় এখনও বাঁধের কাজ হয়নি। সেচ দফতরের বসিরহাটের নির্বাহী বাস্তুকার নিরঞ্জনকুমার সিংহ বলেন, ‘‘সেচ দফতরের অধীনে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার নদী বাঁধ আছে। প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষের পথে। আরও ১১ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়লার পর কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে দুই চব্বিশ পরগনায় নদী ভাঙন রুখতে কোটি টাকা ব্যায়ে কংক্রিটের আয়লা বাঁধের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রতি এক মিটার এই বাঁধ করতে খরচ ধরা হয়েছে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবন এলাকাতে আপাতত ২৭টি জায়গায় মোট ২১ হাজার ৬১২ মিটার কংক্রিটের বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে সন্দেশখালির বেড়মজুর এবং হাসনাবাদের আবাদ শুলকুনি ও চকপাটলির ১৫৮ মিটার কাজ শেষ হয়েছে। এই সাতাশটির মধ্যে একটি জায়গাতে জমির সমস্যার জন্য কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। বাকি হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা, হেমনগর, মালেকানঘুমটি, পঁটিয়া, মঠবাড়ি, সিংহেরকাটি, খোসবাস-সহ মোট ২০টি এলাকায় ১১ হাজার ৯৫ মিটারের কাজ চলছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে সাত বছরে যদি মাত্র ১১ কিলোমিটার বাঁধের কাজ হয় তা হলে ৮৫০ কিলোমিটার আয়লা বাঁধের কাজ কবে শেষ হবে? তার মধ্যে বৃষ্টি হলে তো এলাকায় নদী বাঁধে ফের ভাঙন ধরবে। আয়লা বাঁধ করতে জমির বেশির ভাগ নদীতে চলে যাবে। তা হলে ফের জমি অধিগ্রহন করে আদৌ কি সুন্দরবন এলাকাতে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়ার কাজ শেষ হবে নাকি বাঁধের টাকাও জলে চলে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dam construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE