Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু ছাত্রের, প্রতিবাদে পথ অবরোধ

সোমবার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে জয়নগরের গোচরণের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম পৃথ্বীশ সর্দার। বাড়ি জয়নগরের চন্দনেশ্বরে।

নিজের আঁকা নিয়ে ছবি তুলেছিল পৃথ্বীশ।

নিজের আঁকা নিয়ে ছবি তুলেছিল পৃথ্বীশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৫
Share: Save:

সাইকেল নিয়ে টিউশন পড়তে গিয়েছিল বছর বারোর কিশোর। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না। পথেই ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল তার।

সোমবার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে জয়নগরের গোচরণের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম পৃথ্বীশ সর্দার। বাড়ি জয়নগরের চন্দনেশ্বরে। ঘটনার পরে ক্ষিপ্ত জনতা আটক করে ট্রাকটিকে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের প্রতিবাদে বেশ কিছুক্ষণ কুলপি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে অবরোধ ওঠে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোচরণে বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে থাকত পৃথ্বীশ। পড়াশোনা করত সরবেড়িয়ায় টিএস সনাতন স্কুলে। ওখানকারই রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবাশ্রমে টিউশন পড়তে যেত রোজ। এ দিনও সকালে পড়তে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোচরণ গার্লস হাইস্কুলের কাছে একটি কয়লা-বোঝাই ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তার সাইকেলে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পৃথ্বীশের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তা দিয়ে প্রায়ই বেপরোয়া গতিতে বড় গাড়ি যাতায়াত করে। তারই প্রতিবাদে অবরোধ হয়। ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবিও ওঠে। প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। আটকে পড়ে বহু গাড়ি। পরে দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। গাড়ি এবং চালককে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি, বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও অবরোধকারীদের আশ্বস্ত করেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনার পরে পড়ে রয়েছে তার সাইকেল।

গোচরণের স্টেশন-সংলগ্ন কদমতলা এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া থাকত পৃথ্বীশরা। তার মৃত্যুতে শোক নেমেছে গোটা এলাকায়। সরবেড়িয়ার শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবাশ্রমেও অনেক দিন ধরে যাতায়াত ছিল পৃথ্বীশের। দুই ভাই বোনই ওখানে পড়াশোনা করত। আঁকা শিখত। পৃথ্বীশের মৃত্যুতে থমথমে সেই আশ্রমের পরিবেশও। পড়াশোনা, আঁকার পাশাপাশি ছেলেটি আশ্রমের নানা কাজ করত হাসিমুখে। আশ্রমে পৃথ্বীশের শিক্ষক পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব সময়ে বলত, দাদা আমি বড় হলে তোমাদের মতোই আশ্রমের ভার নেব। এই বয়সে ওর দায়িত্ববোধ আমাদের অবাক করে দিত। ছোট বোনের স্কুল-টিউশনে পৌঁছে দেওয়া— সব কিছু ও-ই সামলাত। সকলেরই খুব প্রিয় ছিল পৃথ্বীশ।’’

পড়াশোনাতেও ভাল ছিল ওই কিশোর। পার্থপ্রতিম বলেন, ‘‘গত শনিবার একটা ছবি এঁকে দেখাতে এনেছিল। কী মনে হল, সেই ছবিটা হাতে নিয়ে ওর একটা ছবি তুলে দিই। ভাবতেই পারিনি সেই হবে শেষ ছবি!’’

ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE