যশোর রোডের পাশে নয়ানজুলিতে জমে রয়েছে আবর্জনা। — নিজস্ব চিত্র।
ডেঙ্গির হানাদারি কমার নাম নেই। উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকদের ‘চেম্বারে’ উপচে পড়ছে জ্বরে আক্রান্তদের ভিড়। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, পরীক্ষায় অনেকেরই ডেঙ্গি ধরা পড়বে। এই পরিস্থিতিতে কিছু এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে।
জেলার মধ্যে আমডাঙা এবং বনগাঁ মহকুমায় দু’ধরনের রোগীই অনেক। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রের খবর, জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সেখানে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হয়েছে। অ্যালাইজা পরীক্ষায় কারও ডেঙ্গি পজ়িটিভ হলে, তাঁকে আলাদা জায়গায় রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই বলেন, “সোমবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত প্রায় ৪০ জন মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বনগাঁ, বাগদা, গোপালনগর, গাইঘাটার পাশাপাশি নদিয়া জেলা থেকেও ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী এখানে এসে ভর্তি হচ্ছেন।”
মহকুমা জুড়ে ডেঙ্গি ছড়ালেও প্রতিরোধে প্রশাসন এখনও যথেষ্ট সক্রিয় নয় বলে অভিযোগ। মহকুমার গ্রামীণ এলাকার বহু বাসিন্দার অভিযোগ, মশা মারার তেল নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে না। চুন বা ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজ, নিকাশি নালা পরিষ্কার, ঝোপ-জঙ্গল সাফাইয়ের কাজ চলছে ঢিমেতালে। বাগদার পারকৃষ্ণচন্দ্রপুর থেকে এক মহিলা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর স্বামীর অভিযোগ, “স্ত্রী ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পর এলাকায় মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগে থেকে কেন ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ হল না?”
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, যততত্র গাড়ির টায়ার, মাটির হাঁড়ি, প্লাস্টিকের ব্যাগ, থার্মোকলের বাটিতে জল জমে আছে। কাঁচা-পাকা নিকাশি নালায় প্লাস্টিক ও আবর্জনা জমে আছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই ডেঙ্গি প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ করা না হলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
প্রশাসনের অবশ্য দাবি, ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজ চলছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, মানুষকেও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাড়িতে যেন জল না জমে। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন জানান, এলাকায় কেউ ডেঙ্গি আক্রান্ত হল, সেই বাড়ির আশপাশের ৫০টি বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সমীক্ষা করছেন। কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে তাঁর ডেঙ্গি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রামবাসীকে সচেতন করছেন। মশারি টাঙানো, ফুলহাতা জামা পরতে বলা হচ্ছে। ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জল নষ্ট করে দিচ্ছেন।
কয়েকদিন ধরে আমডাঙা ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকাতেও জ্বর-ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দু’শো। এর মধ্যে ৩৫ জন আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। বাকিদের বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে।
তবে, আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। অভিযোগ, হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই নেই। বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এমনকি, ওষুধও বাইরে থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক ঠিকমতো রোগী দেখছেন না বলেও অভিযোগ উঠছে। গাদামারার বাসিন্দা আব্দুল মোত্তালেবের খেদ, “আমার ছেলে এখানে ভর্তি রয়েছে। স্যালাইন, ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। বিধায়ককে বলেছি এখানকার সমস্যার কথা।”
দিনকয়েক আগে ব্লক হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান। তাঁর সামনেই পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর পরিজনেরা। তিনি স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে, আমডাঙা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুণ বালা পরিষেবা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রশাসন সূত্রের দাবি ডেঙ্গি প্রতিরোধে কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এলাকাবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা জানার কাজও চলছে। এর মধ্যেই স্থানীয় আনাজের হাট দিন তিনেক বন্ধ রাখা হয়। বাজার কমিটি জানিয়েছে, হাটে দীর্ঘদিন বর্জ্য জমেছিল। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে সেই আবর্জনা সাফ করার জন্যই বাজার বন্ধ রাখা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy