পুজোর আনন্দে ভেসে যেতে যেতে...। নিজস্ব চিত্র।
পাড়ার ছেলেরা বন্দুক হাতে এগিয়ে আসছে দেখে এক ছুটে অন্য জায়গায় চলে যেতাম। আর ওরাও বার বার আমাদের দিকেই বন্দুক উঁচিয়ে নিয়ে এসে কানের সামনে ক্যাপ ফাটিয়ে ভয় দেখাত।
আর একটু বড় হলে পুজোর সময় অনেক প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু কাউকে বিশেষ পাত্তা দিয়েছি বলে মনে পড়ে না।
আর এখন তো েস সব কথা মনে পড়লে একা একাই হাসি। দিনগুলো ভোলার নয়।
আমার পাড়ার পুজো, বসিরহাটের বলাকা ক্লাবের কথা বড্ড মনে পড়ে। ভোর হলেই এক ছুটে ক্লাবে চলে যেতাম। ফল কাটা থেকে শুরু করে পুজোর কাজে মেতে উঠতাম। গোটা পাড়ার মেয়ে-বৌরাই এই কাজ করত। কাজ শেষে বাড়ি গিয়ে লুচি খেয়ে আসতাম। আবার মণ্ডপে এসে দধিকর্মা। কত যে ব্যস্ততা তখন...।
এক পাড়ার আলো শেষ হতে না হতেই আর একটা পাড়ার আলোর মালা শুরু হয়ে যেত। সারা বছর আলো-আঁধারিতে ঢাকা রাস্তাগুলো পুজোর ক’টা দিন যেন অচেনা হয়ে উঠত। ঘুম ভাঙত মাইকে গান শুনে। যখন রাতে চোখ ঘুমে ঢুলে আসছে, তখনও শুনতে পেতাম পুজোর গান। দুর্গাপুজোয় কুড়ি-বাইশটা জামা না হলে মন খারাপ হতো। সকাল বিকেল নতুন জামা পড়ে ফেলতাম। এটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। আর কোন দিন কোন জামা পরব, কেমন সাজব, সে সব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কত রাত ঘুমই আসত না!
আর ছিল বন্ধুদের সঙ্গে গোল করে বসে আড্ডা মারা। বন্ধুদের সঙ্গে কাছে-পিঠে দু’একটি ঠাকুর দেখারও বাড়ি থেকে অনুমতি মিলত। বাড়ি থেকে রাত জেগে কলকাতার ঠাকুর দেখতে যেতাম। বিজয়া দশমীর কথা মনে পড়লে যেন এখনও চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। কেন জানি মায়ের চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারতাম না। বসিরহাটের ইছামতী নদীর ভাসান এমনিতেই বিখ্যাত। নৌকোয় করে মাকে নিয়ে যাওয়া হতো মাঝ নদীতে। খুব ইচ্ছা করত নৌকোতে ওঠার। কিন্তু বাড়ি থেকে পারমিশন ছিল না। শুধু নৌকোয় উঠে মাকে প্রণাম করেছিলাম দু’একবার।
বিজয়ার খাওয়া বলতে ছিল ঘুগনি, নারকেলের ছাঁচ, নিমকি, জিলিপি। আ-হা... সে স্বাদ যেন এখনও মুখে লেগে রয়েছে।
এখন পুজোয় অনেক হইচই হয়। অনেক খরচ হয়। কিন্তু আগের মতো যেন সেই উত্তেজনাটা নেই। আন্তরিকতাটাও যেন কমে আসছে। এখন বিচারক হয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরি। অনেক ভাল ভাল পুজো দেখা হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে মণ্ডপে গিয়ে ঠাকুর দেখাটা বড্ড মিস করি। — অনুলিখন: নির্মল বসু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy