Advertisement
০৮ মে ২০২৪

জলে কুমির, নদীতে নামতে আতঙ্কে মানুষ

শেষ চৈত্রের রোদে গা মেলে নদীর পাড় জুড়ে শুয়ে আছে সে। বালি কাটতে গিয়েছিলেন সুকুমার মণ্ডল। হঠাৎ দেখেন পেল্লায় সাইজের একটি কুমির রোদ পোহাচ্ছে নদীর ধারে। কোদাল-ঝুড়ি কাঁধে উল্টো দিকে দৌড় দেন সুকুমার।

রোদ-পোহানো: নদীরে ধারে ঝোপের মাঝে। নিজস্ব চিত্র

রোদ-পোহানো: নদীরে ধারে ঝোপের মাঝে। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

শেষ চৈত্রের রোদে গা মেলে নদীর পাড় জুড়ে শুয়ে আছে সে।

বালি কাটতে গিয়েছিলেন সুকুমার মণ্ডল। হঠাৎ দেখেন পেল্লায় সাইজের একটি কুমির রোদ পোহাচ্ছে নদীর ধারে। কোদাল-ঝুড়ি কাঁধে উল্টো দিকে দৌড় দেন সুকুমার।

মাছ ধরতে যাবেন বলে নৌকোয় উঠছিলেন কয়েকজন। চোখে পড়ল, পাড়ের কাছে অগভীর জলে নাক উঁচিয়ে সাঁতরাচ্ছে কুমির। নৌকো ছেড়ে সেদিনকার মতো ঘরের পথ ধরলেন মৎস্যজীবীরা।

হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের বাইনাড়া এবং কুমিরমারি গ্রামের ডাঁসা নদীতে প্রায়ই কুমির ভাসতে দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। ভয়ে এলাকার লোকজন মাছ ধরতে নামছেন না নদীতে। এখনও পর্যন্ত কুমিরের কামড়ে বিশেষ ক্ষতি হয়েছে এমনটা নয়। একখানা ভেড়া দিয়ে একবার প্রাতরাশ সেরেছিল সে। কিন্তু মাঝে মধ্যে লোকালয়ের ইতিউতি কুমির-দর্শনে লোকজন থরহরিকম্প!

স্থানীয় প্রশাসন ও বন দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান সরোজিনী মণ্ডল জানান, কুমিরমারি মনসাতলা দ্বীপের জঙ্গলে বালির চরে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে কয়েকটি কুমিরকে। মৎস্যজীবীরা নদীতে মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকে তো দিনের পর দিন মাছ ধরতেই বেরোচ্ছেন না। এ দিকে, এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকাই হল মাছ ধরা। বিকল্প কোনও পেশা নেই। মহিলারা কিছুটা জলে নেমে মাছ ও মিন ধরতেন। ইদানীং তা-ও বন্ধ। ফলে সুন্দরবন-লাগোয়া ওই সব প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের রোজগারে টান পড়েছে।

কুমিরমারি গ্রামের মদন মাহাতো, কল্পনা মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘জীবিকা বন্ধ হওয়ায় সমস্যা তো বেড়েছেই। তার মধ্যে আবার ডাঙা থেকে একটি ভেড়াকে কুমির টেনে নিয়ে যাওয়ায় নদীর ধারে বাস করাও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ বাইনাড়া গ্রামের সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘কুমিরমারিতে নদীর মাঝে দ্বীপে প্রচুর গাছ হওয়ায় জঙ্গলের চেহারা নিয়েছে। সেখানে বড় এলাকা জুড়ে বালির চর পড়েছে। সেখানেই কুমিরেরা এসে রোদ পোহাচ্ছে। জঙ্গলের মধ্যেও ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে।

সুবীর ঘোষ নামে মিনাখাঁর বন দফতরের এক কর্তা জানান, ওই এলাকায় জলে খাবারের সন্ধান পেয়েছে বলেই হয় তো এসেছে কুমিরগুলি। তবে বেশি দিন তারা এক জায়গায় থাকে না। আশা করা যায়, এখান থেকেও দ্রুত পাততাড়ি গোটাবে। তবে কুমিরের দল এই অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে থেকে গেলে বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

crocodile River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE