Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধুয়ে গেল চেষ্টা, বাঁধ ভেঙে ভাসল ঘর

খবর পেতেই মাইক ফুঁকে লোকজন জড়ো করে ফেলা গিয়েছিল। মাঝ রাতে ঘুম চোখে উঠে সকলে বাঁধ বাঁধার কাজে নেমেও পড়েছিলেন। কিন্তু কয়েকশো মানুষের সেই চেষ্টা ধুয়ে গেল জোয়ারের জলে।

মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র।

মেরামতির কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

খবর পেতেই মাইক ফুঁকে লোকজন জড়ো করে ফেলা গিয়েছিল। মাঝ রাতে ঘুম চোখে উঠে সকলে বাঁধ বাঁধার কাজে নেমেও পড়েছিলেন। কিন্তু কয়েকশো মানুষের সেই চেষ্টা ধুয়ে গেল জোয়ারের জলে। প্লাবিত হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের পুকুরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা।

মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে রায়মঙ্গল নদীর প্রায় ২০০ ফুট বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে এলাকায়। বসিরহাটের মহকুমাশাসক নীতেশ ঢালি বলেন, ‘‘বাঁধ ভেঙে বেশ কিছু চাষের জমির ধান এবং মেছোভেড়ি প্লাবিত হয়েছে।’’ খবর পেয়ে এলাকায় গিয়েছিলেন হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল, ওসি সঞ্জীব সেনাপতি, বিএমওএইচ স্বপন মিস্ত্রি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুদীপ মণ্ডল, প্রধান দীপঙ্কর পান্ডা-সহ সেচকর্তারা।

হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘দ্রুত বাঁধ মেরামতির জন্য সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বিডিওর কথায়, ‘‘এখানে বাঁধ ভাঙলেও জল রিভার গার্ডে আটকে যাওয়ায় বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে। ৩-৪ হাজার বিঘা ধানের জমিতে জল ঢুকেছে। কয়েকটি বাড়ি এবং পুকুর প্লাবিত হয়েছে। আমরা চিঁড়ে-গুড়, ওষুধ-সহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করেছি।’’

ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুকুরিয়া গ্রামে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধে ইটের সোলিংয়ের কাজ হচ্ছিল। সোমবার গভীর রাতে স্থানীয় মহাজনপাড়ার স্বপন মণ্ডলের বাড়ির কাছে হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে বাঁধ ভেঙে পড়ে। জানতে পেরে মাইক প্রচার শুরু হয়। দ্রুত কয়েকশো মানুষকে জড়ো হয়ে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েন। প্রথমে মাটি দিয়ে পরে তার উপরে পলিথিন ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা হয়। মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত গ্রামের মহিলা-পুরুষদের চেষ্টায় বাঁধ মোটামুটি দাঁড়িয়ে যায়।

সকলে ভেবেছিলেন, হয় তো এ যাত্রায় রক্ষা মিলল।

কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে জোয়ারের জল বাড়তে শুরু করে। সেই ধাক্কায় সদ্য তৈরি মাটির বাঁধ ফের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা নোনা জলে প্লাবিত হয়। আরও একবার মাইক ফুঁকে সকলকে একত্রিত করা হলেও বাঁধ রক্ষা করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষে মাইকে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের ফ্লাড সেন্টার-সহ উঁচু জায়গায় সরে যেতে বলা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ভাঙনের মুখ দিয়ে দ্রুত গতিতে গ্রামে জল ঢুকছে। ইতিমধ্যে জল পূর্ত দফতরের রাস্তার গা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। স্থানীয় বীরপাড়ার রাস্তায় মাটি ফেলে উচুঁ করার কাজ করছেন গ্রামের মানুষ। মহাজনপাড়ার বহু বাড়ির বারান্দা, এমনকী ঘরেও জল ঢুকে পড়েছে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘রাত ২টো-৩টে হবে। হঠাৎ হুডড়মুড় শব্দে বুক কেঁপে ওঠে। ঘুম ভেঙেই বুঝতে পারি, বাঁধ ভাঙছে। দ্রুত সকলকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে লোক ডাকাডাকি শুরু করি।’’ মহাজনপাড়ার গঙ্গাধর মণ্ডল, জগবন্ধু মিস্ত্রি, করুণা পাত্র, কল্পনা মণ্ডলদের আফসোস, গ্রামের মানুষ দু’দুবার চেষ্টা করেও বাঁধ রক্ষা করতে পারলেন না। বেলা বাড়তে থাকায় নদীর জোয়ারের জল প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকে। ঘরের মধ্যে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। ঘর ছেড়ে কেউ আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ ফ্লাড সেন্টার কেউ নদী বাঁধের উপরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিডিও বলেন, ‘‘১৭ সেপ্টেম্বর বড় কোটাল। ওই দিন সুন্দরবন এলাকার নদীগুলিতে জল বাড়ার আগেই এখানকার বাঁধ বেঁধে ফেলতে হবে।’’ সে দিকে লক্ষ্য রেখে রাতে জেনারেটরের সাহায্যে আলো জ্বেলে বাঁধের কাজ করার জন্য এলাকার মানুষদের নিয়ে সেচ দফতর তৈরি বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj sahebkhali Raimangal River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE