Advertisement
০৩ মে ২০২৪
License Renewal of Fisherman

লাইসেন্স নবীকরণ বন্ধ, সমস্যায় মৎস্যজীবীরা

রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে প্রতি বছর ৩১ মার্চের আগে হস্তচালিত নৌকো, ভুটভুটি এবং ট্রলারের লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হত।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫১
Share: Save:

ডায়মন্ড হারবারের সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) পদে প্রায় চার মাস ধরে স্থায়ী কোনও আধিকারিক নেই। ফলে সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের ট্রলার, ভুটভুটি বা হস্তচালিত নৌকোর লাইসেন্স নবীকরণ ও হস্তান্তর বন্ধ রয়েছে।

মৎস্যজীবীদের দাবি, তাঁদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হলে আগে ব্লক মৎস্য আধিকারিকের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। সেখান থেকে তা আসবে ডায়মন্ড হারবার এডিএফ মেরিনের কাছে। তারপরে পৌঁছবে জেলা পরিষদে। ফের এডিএফ মেরিনের কাছে আবেদনপত্র এলে চূড়ান্ত হবে। এত দিন ডায়মন্ড হারবার সহ মৎস্য অধিকর্তার অফিসে আবেদন করলে তা তদন্ত করে চূড়ান্ত করা হত।

মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি, এক দিকে স্থায়ী আধিকারিক নেই। অন্য দিকে, নতুন মৌখিক নির্দেশের কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। যার ফলে ধন্দে মৎস্যজীবীরা। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে ট্রলার বা হস্তচালিত নৌকো চালানোর লাইসেন্স নবীকরণ, মালিকানা হস্তান্তর, নতুন লাইসেন্স করা হবে— তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানা সহ গোটা জেলার উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীরা।

রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে প্রতি বছর ৩১ মার্চের আগে হস্তচালিত নৌকো, ভুটভুটি এবং ট্রলারের লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হত। গত তিন বছর ধরে নিয়ম হয়েছে, যে দিন নৌকো, ভুটভূটি ও ট্রলারের লাইসেন্স নবীকরণ বা নতুন রেজিস্ট্রেশন করানো হবে, সে দিন থেকে পরের বছর মেয়াদ ফুরোনোর আগে লাইসেন্স নবীকরণের জন্য আবেদন করতে হবে। এ জন্য রাজ্য সরকারের নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে মৎস্য দফতর থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হয়। পরে জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মৎস্যজীবীদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয় সংশ্লিষ্ট দফতর।

কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায় প্রায় ১০,০৬২টি এ রকম লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্রলার, ভুটভুটি রয়েছে। এক বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে প্রায় দু’হাজারের কাছাকাছি জলযানের। লাইসেন্স নবীকরণ না হওয়ায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে উপকূল পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বন দফতরের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। এমনকী, মামলা করে জরিমানাও করা হচ্ছে লাইসেন্স নবীকরণ না থাকায়।

কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, ‘‘আমার ট্রলারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আমি দু’মাস আগে লাইসেন্স নবীকরণের আবেদন জমা দিয়েছি। এখনও তা হাতে পাইনি। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বন দফতরের হাতে পড়লে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। আগে এমন পরিস্থিতি ছিল না।

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘লাইসেন্স নবীকরণের সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। নবীকরণের কাজ প্রায় বন্ধ বললেই চলে। এখন ঘুরপথে মৎস্যজীবীদের আবেদন করতে বলা হচ্ছে। যার ফলে লাইসেন্স পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। নতুন নিয়ম কোনও মৎস্যজীবী সংগঠনকে জানানো হয়নি। গত বেশ কয়েক বছর এমন নিয়ম ছিল না। এমনকী, মৎস্য দফতর কোনও লিখিত নির্দেশও জারি করেনি। জেলা প্রশাসন এই নিয়ম করছে, কিন্তু তা আমরা জানি না।’’ ডায়মন্ড হারবারে সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) পদে অস্থায়ী ভাবে দায়িত্বে আছেন সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি ডায়মন্ড হারবার ও আলিপুর— দু’টি অফিসের দায়িত্বে আছি। দু’টি জায়গায় কাজে ঠিক মতো সময় দেওয়া যায় না। আর মৎস্যজীবীদের লাইসেন্স নবীকরণের বিষয়টি আমার ভাল জানা নেই। যে কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। স্থায়ী এডিএফ মেরিন কিছু দিনের মধ্যেই আসবেন। তখন মৎস্যজীবীদের সমস্যা মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE