শ্রমিকদের পিএফের টাকা কোথায় গেল?
এই প্রশ্ন তুলেই মহল্লায় মহল্লায় ঘুরছেন ফলতার জোটের প্রার্থী সিপিএমের বিধান পাড়ুই।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) হল ফলতা। পাঁচটি সেক্টরে প্রায় ৫০টি চালু ইউনিট নিয়ে ১৫ হাজার শ্রমিকের রোজকার কর্মযজ্ঞ চলে। এ বারের নির্বাচনে ফলতা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল শ্রমিক অসন্তোষ। এসইজেডের ১ এবং ২ নম্বর সেক্টরে ৬টি চালু প্লাস্টিক ইউনিটের মধ্যে একটি প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ। কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। গত সাড়ে তিন বছরে ঝাঁপ বন্ধ করেছে ৪টি সংস্থা। বেশ কয়েকটি ধুঁকছে। যার অন্যতম কারণ হল শ্রমিকদের নূন্যতম বেতন নিয়ে ঝামেলা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঠিকাদারের হাতেই ফলতা শিল্পাঞ্চলের পাঁচটি সেক্টরের কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। শ্রমিক সরবরাহ, কাঁচামাল সরবরাহ, শিল্পের সঙ্গে যুক্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, যন্ত্রাংশ মেরামতির ঠিকা— সব কিছু থেকেই কাটমানি আসে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের হাতে। এদের পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেট। যার নিয়ন্ত্রণও শাসক দলের হাতে। এদের বাদ দিয়ে ইউনিট চালানো প্রায় অসম্ভব। নানা কারণে শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ। মাঝে মধ্যেই হচ্ছে লক আউট, কর্মবিরতি। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের বেতন থেকে স্বাস্থ্য খাতে টাকা কাটা হয়। কিন্তু পরিষেবা মেলে না। কোনও চিকিৎসক অসুস্থ হলে এসইজেডের চিকিৎসক বেশিরভাগ সময়েই তাঁকে জোকা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সেখানেও মাঝেমধ্যে চিকিৎসা মেলে না বললেই চলে।
বাম আমলেও এই সমস্যাগুলি ছিল। কিন্তু পরিবর্তনের পরে তা হলে কী পেল ফলতা?
এই প্রশ্নেই ভোট চাইছেন জোটপ্রার্থী বিধানবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সাড়ে তিন বছরে শ্রমিকদের ইএসআই এবং পিএফ মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে জমা পড়েনি। কারা নিল সেই টাকার ভাগ?’’
দলের নেতাদের সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকার অভিযোগ মানেননি ফলতার বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক তথা এ বারের প্রার্থী তমোনাশ ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘দলের কোনও নেতা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নেই। শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে সেটা সব সংস্থায় নয়। আমরা অনেকটাই সমাধান করেছি।’’ তবে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে ফলতায় যে প্রচারপত্র বিলি করেছে তৃণমূল, সেখানে শ্রমিক সমস্যা নিয়ে প্রায় কিছুই বলা হয়নি।
গত পাঁচ বছরে কোন বিষয়গুলিকে ফলতায় সাফল্য হিসেবে দাবি করছে শাসকদল?
প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ফলতা-মথুরাপুর মেগা জল প্রকল্পের কথা। তবে তার কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। এ ছাড়া, ৩২ কেভির বিদ্যুৎ বণ্টনের সাব স্টেশনের কাজও শুরু হয়েছে। এসবিএসটিসি বাসের কাউন্টার চালু হয়েছে। আইটিআই কলেজ তৈরি হলেও এখনও সেখানে পঠনপাঠন চালু হয়নি। সারগড়িয়ায় দুগ্ধ প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। রাস্তা সারানো হয়েছে। তৃণমূলের আশ্বাস ফের ক্ষমতায় এলে আধুনিক পরিকাঠামোযুক্ত কমিউনিটি হল, স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে। সারানো হবে স্লুইসগেট। কাজ না হওয়ার তালিকাটা মোটেও কম নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ফলতা-বুড়ুল রোডে উত্তর বাসুল্লাটের ভাঙা সেতু সারানো হয়নি। অথচ থানা, হাসপাতালে আসার জন্য ওই সেতু দিয়েই দিয়েই পার হন মানুষ। অনেক এলাকায় টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুযোগ থাকলেও পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করা যায়নি।
তৃণমূলের একাংশও মানে, গত পাঁচ বছরে এলাকায় খুব বেশি সময় দেননি তমোনাশবাবু। তাঁর কয়েকজন প্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপরেই ভরসা করেছিলেন। এলাকায় শাসক দলের যুব সংগঠনও তেমন শক্তিশালী নয়। সেই ফাঁক দিয়েই ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন জোটপ্রার্থী। ফলতার ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বামেদের দখলে রয়েছে ৪টি। আরও কয়েকটিতে দু’পক্ষের শক্তি প্রায় কাঁটায় কাঁটায়। ফলতার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকেন এসইজেডের শ্রমিকেরা। তাঁদের ভোট এবার জোটের ঝুলিতেই আসবে বলে আশা করছেন বিধানবাবু। এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। সেগুলিই তাঁর ‘প্লাস’ পয়েন্ট বলে দাবি করছে বাম এবং কংগ্রেস শিবির।
স্থানীয় তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিরোধীদের এই দাবিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘বিধায়ক এলাকায় থাকতেন না, এ কথা ভুল। আমি এখানকার ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছি। এলাকায় ৬৮টি প্রশাসনিক বৈঠক করেছি এলাকায়। আরও উন্নয়ন অপেক্ষা করছে ফলতার জন্য।’’
বদলে যাওয়া পিচে জয় কী এতই সহজ? শ্রমিকদের চাপা আক্ষেপ কিন্তু অনেক হিসেব বদলে দিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy