জ্বর নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাগদার ঠাকুর দাস। স্থানীয় একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে ডেঙ্গির পরীক্ষা করিয়েছিলেন। রক্তের রিপোর্টে ছিল এনএস-১ পজিটিভ। কিন্তু ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা এবং আনুষঙ্গিক অন্য কিছু রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদিত স্থানীয় যে সব ল্যাবরেটরির নামের তালিকা আছে, তাতে ওই ল্যাবের নামও ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের একবার বনগাঁ পুরসভার স্বাস্থ্যদ্বীপ থেকে ঠাকুরের রক্ত পরীক্ষা করান। সেখানে দেখা যায়, রক্তের রিপোর্ট নেগেটিভ। আরও নিশ্চিত হতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বনগাঁ শহরের একটি সরকারি অনুমোদিত ল্যাবরেটরি থেকে ফের রক্ত পরীক্ষা করান। তাতেও দেখা যায় রক্তের রিপোর্ট নেগেটিভ।
বনগাঁ হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া এক মহিলাকে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দু’ঘণ্টার মধ্যে ওই মহিলা ডেঙ্গির পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে হাজির। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার জন্য অ্যালাইজা টেস্ট করতে কম পক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। রোগীর যাতায়াত করতে আরও এক ঘণ্টা লাগার কথা। এই পরিস্থিতিতে ওই বেসরকারি ল্যাবের রিপোর্ট দেখে সন্দেহ হতে বাধ্য।
বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক রোগী রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ল্যাবগুলির ঠিকানা দমদম বা কলকাতার। সন্দেহ থাকে, বনগাঁ, গোপালনগর, বাগদা, গাইঘাটা থেকে সাধারণ মানুষ রক্ত পরীক্ষা করাতে কলকাতা বা দমদমে কি সত্যিই যাচ্ছেন?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন ল্যাবরেটরি থেকেও রক্তের রিপোর্ট নিয়ে রোগীরা আসছেন, যাতে কোনও ঠিকানা পর্যন্ত লেখা থাকছে না। সম্প্রতি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতিহীন ল্যাবগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের সিন্ধান্ত হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর রক্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ হচ্ছে। এলাকায় অনেক বেআইনি ল্যাব রয়েছে বলেও আমাদের মনে হচ্ছে। সেই সব ল্যাবগুলির বিরুদ্ধে সমিতির বৈঠকে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় জানান, মহকুমার ৫৪টি ল্যাবরেটরির তালিকা রয়েছে। এর বাইরেও কিছু ল্যাবরেটরি রয়েছে। মঙ্গলবার বনগাঁ মহকুমার সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক শতরূপা বসু মহকুমার ল্যাবরেটরির মালিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে যে সব ল্যাব মালিক উপস্থিত হননি, তাঁদের ফের নোটিস পাঠিয়ে ডাকা হচ্ছে। বৈঠকে ল্যাব কর্তৃপক্ষগুলিকে অনুমোদনের নথিপত্র ও ডেঙ্গি পরীক্ষার কী ব্যবস্থা আছে, সে সম্পর্কে কাগজপত্র দ্রুত স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কয়েকটি ল্যাব কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করতে চলেছে। শুক্রবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক রাঘবেশ মজুমদার ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বনগাঁয় আসেন। শহরের একটি ল্যাবরেটরি মালিক শুভাশিস পোদ্দার বলেন, ‘‘বেআইনি ল্যাবের জন্য আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের কাছে পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ভুল ধারণা যাচ্ছে।’’
অভিযোগ উঠেছে, মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর থেকে কিছু ল্যাবরেটরির লোক সরাসরি রক্ত নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল থেকেই। দিন কয়েক আগে জেলাশাসক অন্তরা আচার্য হাসপাতালে এসে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘নিরাপত্তা কর্মীর অভাবে এ সব হচ্ছিল। আমরা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। এখন আর কেউ বাইরে থেকে হাসপাতালে এসে রোগীদের রক্ত নিয়ে যেতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy