Advertisement
০৬ মে ২০২৪

চোলাইয়ের কারবারে রাশ গ্রামে

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে মোট ১২০টির মতো আদিবাসী পরিবারের বাস। মাস ছ’য়েক আগেও ষাটটি পরিবার চোলাই তৈরি করেই জীবনযাপন করত। দেদার চোলাই বিক্রিও হত।

চোলাই বিক্রি ও খাওয়া বন্ধ করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন যুবকেরা। নিজস্ব চিত্র

চোলাই বিক্রি ও খাওয়া বন্ধ করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন যুবকেরা। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

অভাবের সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পরে অবস্থা আরও পড়তে শুরু করেছিল। চোলাই বিক্রির কারবারে নেমে পড়েন জ্যোৎন্সা সর্দার (নাম পরিবর্তিত)। নিজেও নেশা ধরে ফেলেন। কিন্তু এখন এ সব বন্ধ। সৌজন্যে, পুলিশ এবং এলাকার কিছু উদ্যোগী যুবক।

বনগাঁ ব্লকের মুড়িঘাটা আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। পুলিশের ধরপাকড়ও বেড়েছে। তা ছাড়া, পাড়ার ছেলেরাও বোঝাচ্ছে, চোলাইয়ের নেশা করা ভাল নয়। সে কারণেই কারবার ছেড়েছি।’’ গ্রামের দীপু সর্দার, অনিতা সর্দার, মন্টু সর্দারেরা জানান, তাঁরাও এক সময়ে চোলাইয়ের নেশা করতেন। কিন্তু এখন তা বন্ধ হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে মোট ১২০টির মতো আদিবাসী পরিবারের বাস। মাস ছ’য়েক আগেও ষাটটি পরিবার চোলাই তৈরি করেই জীবনযাপন করত। দেদার চোলাই বিক্রিও হত। ঘরে ঘরে চোলাইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা। আর বাড়ি ফিরে অশান্তি বাধাতেন। রোজগারের টাকার প্রায় পুরোটাই উড়ে যেত নেশার পিছনে। বাইরে থেকে চোলাই কিনে নিয়ে যেত অনেকে। এক কথায় ‘চোলাই গ্রাম’ বলেই দুর্নাম রটেছিল গ্রামের।

ইদানীং বদলেছে ছবিটা। গ্রামের লোকজন জানালেন, হাতেগোনা কয়েকটা পরিবার এখনও চোলাইয়ের কারবার ছাড়েনি বটে, কিন্তু বাইরে থেকে এখন কেউ আর চোলাই কিনতে গ্রামে আসে না। নেশার প্রবণতাও কমেছে।

কিন্তু রোজগারের মূল রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেলে লোকে খাবে কী? স্থানীয় বিধায়ক দুলাল বর বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বেশি করে পান, সে দিকে নজর রাখা হবে।’’ তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক।

কিন্তু কী ভাবে ভাটা পড়ল বেআইনি কারবারে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে আদিবাসী পল্লিমঙ্গল সমিতি নামে একটি ক্লাব আছে। ক্লাবের সদস্যেরা নিজেরা এই কাজে এগিয়ে আসেন। তুষার সর্দার, বিট্টু সর্দার, অভিজিৎ সর্দার, বিদ্যুৎ সর্দারদের মতো যুবকেরা সন্ধ্যায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন, চোলাই তৈরি হচ্ছে কিনা। কেউ নেশা করলে তাঁদের বোঝানো হচ্ছে, কী কী ক্ষতি হতে পারে। কেউ চোলাই তৈরি বন্ধ না করলে প্রয়োজনে তাঁরা পুলিশকে জানিয়ে পদক্ষেপ করছেন।

পুলিশও চোলাই-মুক্ত গ্রাম গড়তে নানা পদক্ষেপ করছে। ধরপাকড়ের পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সচেতনতা শিবিরেরর আয়োজন করছে পুলিশ। গ্রামের যুবকদের সঙ্গে থানা থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। সাহিত্য পত্রিকা বেরোচ্ছে।

বনগাঁ থানার আইসি সতীনাথ চট্টরাজ বলেন, ‘‘এই সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের মনকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।’’ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন কাজের মধ্যে থাকলে নেশা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসবেন বলে তাঁর বিশ্বাস। রবিবার এলাকায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। সতীনাথবাবু জানান, তবে গ্রামে চোলাই তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু হাঁড়িয়া ও চোলাইয়ের নেশা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি এখনও। সেই চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangaon hooch campaign বনগাঁ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE