কয়েক মাস ধরেই গোয়েন্দাদের কাছে খবর আসছিল, জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী মহকুমা বসিরহাটে। গোয়েন্দাদের সেই খবরকে সত্যি প্রমাণ করে ক’দিন আগে বসিরহাট শহর থেকে ধরাও পড়েছে খাগড়াগড় কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত ইউসুফ। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরসুমে সীমান্তে সুরক্ষা বড়সড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে।
সে দিকে লক্ষ্য রেখেই শুক্রবার বারাসতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন পুলিশ কর্তারা। সেখানে ছিলেন আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজয় রানাডে, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। জেলার প্রতিটি থানার আইসি, ওসি, এসডিপিও এবং বিএসএফের কর্তাদেরও ডাকা হয়েছিল। সামগ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি বসিরহাট-বনগাঁর সীমান্তবর্তী পুজোগুলির নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। টাকিতে বিজয়া দশমীর দিন যে উৎসব হয়, তা গোটা রাজ্যের চোখ টানে। ওই দিন আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় পেট্রাপোল সীমান্তে থানার উদ্বোধন হয়েছে। বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তে নাকা বসানো হয়েছে। টাকিতে দশমীর দিনে আন্তর্দেশীয় উৎসব এবং বসিরহাট-সহ জেলার সীমান্তবর্তী শহরের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের পক্ষে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
বসিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, হাসনাবাদ এবং হিঙ্গলগঞ্জ— এই পাঁচটি থানা এলাকার সীমান্তে বড় অংশে কাঁটাতার না থাকায় এবং নদী থাকায় বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকে গণ্ডগোল পাকাতে পারে, এই চিন্তায় সারা বছরই থাকতে হয় পুলিশকর্তাদের। তার উপরে সম্প্রতি বসিরহাট শহর থেকে জঙ্গি ধরা পড়া বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার বসিরহাট পুরসভা এবং টাকি পুরসভার পক্ষ থেকেও পূজোর দিনগুলিতে নিরাপত্তামূলক নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি একই ভাবে প্রতিটি ক্লাব উদ্যোক্তাদের পুজোর দিনগুলিতে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম সন্দেহজনক ব্যক্তি কিংবা জিনিশ পড়ে থাকতে দেখলে তা যেন থানায় জানানো হয়, অনুরোধ করেছে পুরসভাগুলি।
বসিরহাটের পুরপ্রধান তপন সরকার বলেন, ‘‘উৎসবের দিনগুলিতে বেশি বেশি করে চোখ-কান খোলা রাখার জন্য ক্লাব সদস্যদের অনুরোধ করা হয়েছে।’’ টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকির ইছামতী নদীর অন্য পাড়ে বাংলাদেশের সাথক্ষিরা। মূল আকর্ষণ বিজয়া দশমীর দিন দুই বাংলার মানুষের মিলন। সেই উৎসবে কোনও রকম সমস্যা যাতে কেউ না করতে পারে, সে দিকে লক্ষ রাখার জন্য ক্লাবগুলিকে বলা হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎসবের দিনগুলিতে সাদা পোশাকের প্রচুর পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্ত এলাকা ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তা, সেতুতে নাকা বসানো হচ্ছে।
মণ্ডপের সামনে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ-এর হোডিং লাগানোর অনুরোধ জানিয়ে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘শহরের বুকে জঙ্গি ধরা পড়ার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। অচেনা মানুষ যাতে ঘুরে বেড়াতে না পারে, সে দিকে সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy