Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অ্যাম্বুল্যান্স দূর হটো, নির্দেশ দিলেন সুপার

কলকাতার হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি টাকা নেয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবরা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০১:২৭
Share: Save:

কলকাতার হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে বেশি টাকা নেয় বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার খোদ হাসপাতাল সুপার শঙ্করলাল ঘোষের কাছ থেকে বেশি টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বিরুদ্ধে। এরপরেই সুপার হাসপাতাল চত্বরে থাকা ওই সব বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলিকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। সুপারের এই সিদ্ধান্তে খুশি রোগীর আত্মীয়েরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে পুলিশ বছর পঞ্চান্নর এক প্রৌঢ়াকে রাস্তা থেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁর পায়ে পচন ধরেছিল। প্রথমে তাঁকে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। কিন্তু দুর্গন্ধ ছড়ানোয় তাঁকে বাইরে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন অন্য রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। পরে ওই প্রৌঢ়ার বাড়ির লোকজন এসে আরও ভাল চিকিৎসার জন্য আরজিকরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স ওই সময়ে ছিল না। তাই সুপার বুধবার বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কাছে যান।

অভিযোগ, গাড়ি চালকেরা সাড়ে ১৪০০ টাকা ভাড়া এবং সঙ্গে সার্ভিস ট্যাক্স চান সুপারের কাছে। সুপার তাঁদের জানান, এত ভাড়া নেওয়ার কথা নয়। কারণ, হাসপাতালে হাবরা পুরসভার তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স আছে। তাতে আরজিকরে রোগী নিয়ে যেতে খরচ হয় ৮৫০ টাকা। আর হাসপাতালের নিজস্ব যে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স আছে (নিশ্চয় যান), তাতে খরচ হয় ৯০০ টাকা।

সুপারের কথাতেও ভাড়া কমাতে রাজি হননি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। এর পরেই সুপার ওই প্রৌঢ়াকে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সে করে আরজিকরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি ওই সব বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলি হাসপাতাল চত্বর থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

সুপারের এই নির্দেশের পরে ক্ষুব্ধ অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা বুধবার থেকেই গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। বৃহস্পতিবারও তাঁরা পরিষেবা দেওয়া বন্ধ রেখেছেন।

সুপার বলেন, ‘‘বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নন কমার্শিয়াল গাড়ি। অনেক চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। গাড়ির সব নথিপত্রও ঠিক নেই। তা ছাড়া, এর আগে কেউ আমার কাছে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেননি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, চালকদের লাইসেন্স ও সব কাগজপত্র ঠিক যদি না থাকে, তা হলে এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি সুপার। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস ছ’য়েক আগে সুপার ওই সব অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নথিপত্র জমা দিতে বলেছিলেন। কেউ তা দেয়নি। হাসপাতাল চত্বরে থাকলেও ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা এত দিন কোনও পার্কিং ফি-ও দিতেন না।

তবে পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা হবে? সুপারের কথায়, ‘‘ওই অ্যাম্বুল্যান্স সরিয়ে দেওয়ার ফলে রোগীদের সাময়িক অসুবিধা হবে। তবে হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েই পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।’’ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের বেশি ভাড়া নেওয়া মেনে নেওয়া যাবে না। হাসপাতাল সুপার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক প্রলয় আচার্যও জানিয়েছেন, ওই সব অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়াতে পারবে না।

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই সব বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। তাঁরা জানান, সুপারের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ি সংক্রান্ত সব নথি জমা দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Super
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE