বিপর্যয় রোখার তৎপরতা। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়।
আকাশে চক্কর কাটছে বিমান, মাটিতে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে কয়েকশো পুলিশ, বিএসএফ, দমকলের কর্মী।
শুক্রবার সকালে সবগুলিই হল সন্দেশখালির ন্যাজাট ১ ব্লকে। কিন্তু কোনওটাই সত্যি নয়, ঝড় হলে কী ভাবে উদ্ধার কাজ হবে তার মহড়া।
এ দিন সকাল থেকেই সন্দেশখালি জুড়ে শুরু হয়েছিল বৃষ্টি, সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। তার মধ্যেই ১০টা নাগাদ ন্যাজাট বাজার এলাকার একটি মাঠ থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, স্থানীয় দক্ষিণ আখড়াতলায় ঘূর্ণিঝড় হতে চলেছে। তার পরেই এনডিআরএফ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা বেতনি নদীর বাঁধের পাশে খাদিপাড়ার বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে যান। নদীতে নামানো হয় স্পিড বোট। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত পালের উপস্থিতিতে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। কয়েকশো বাসিন্দা এবং গবাদি পশুকে উদ্ধার করে স্থানীয় ফ্লাড সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মজুত ছিল ওষুধ, দুধ, বিস্কুট, পোশাক এবং কম্বল। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী।
এর মধ্যেই ন্যাজাট মাঠ থেকে ফের ঘোষণা করা হয়, স্থানীয় বিদ্যাধরী নদীর পাশে ৫ নম্বর পাটনিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় এসেছে। ভেঙে পড়েছে গাছ। পুলিশ, বিএসএফ, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স-সহ রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা ১০-১২টি গাড়ির কনভয় নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। রাস্তার মধ্যে ভেঙে পড়া গাছগুলি ব্যাটারিচালিত করাত দিয়ে কাটা হয়। লাইফ জ্যাকেট পরে জলে নেমে পড়েন ডুবুরিরা। বিদ্যাধরী নদীতে দু’টি স্পিড বোট নামানো হয়। আকাশে বিশেষ ভাবে নিয়ন্ত্রিত পাইলটবিহীন বিমান ঘুরতে দেখা যায়। এনডিআরএফের ২ নম্বর বিএন ব্যাটেলিয়নের কর্তারা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে বিপর্যয়ের খতিয়ান পাঠাতে শুরু করেন।
এ দিন সকাল থেকে প্রশাসনের সাজ সাজ রূপ দেখে গ্রামবাসীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসতে চলেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তাঁরা বুঝতে পারেন, পুরো বিষয়টিই মহড়া। দক্ষিণ আখরাতলার ত্রাণশিবিরে থাকা কল্পনা মাহাত, বিমল মালি, রত্না দাস বলেন, ‘‘সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। তার মধ্যে প্রশাসনের কর্তারা এসে বললেন, ঘূর্ণিঝড় আসছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে গরু, ছাগল নিয়ে ত্রাণশিবিরে চলে যাই। সেখানে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি, ঝড় এলে কী ভাবে উদ্ধার করা হবে সেটাই অভিনয় করে দেখানো হচ্ছে।’’
তবে পুরোটা অবশ্য সাজানো ছিল না। এ দিন মহড়া চলাকালীন এক মহিলার প্রসব বেদনা ওঠে। তাঁকে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে উদ্ধারকারী দল।
এ দিনের মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। তাঁরা জানান, যেখানে ঝড় হয় সেই এলাকায় মোবাইল এবং বিদ্যুৎসংযোগ থাকে না। তখন কী ভাবে ওয়াইফাই দিয়ে অন্যত্র ছবি এবং খবর পাঠানো যাবে সেটাও এ দিন শেখানো হয়।
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তা দেবাশিস নন্দী বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকায় বিপর্যয় ঘটলে কী ভাবে উদ্ধারকাজ হবে এবং ত্রাণ দেওয়া হবে তা নিয়েই মহড়া।’’ দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সঞ্জয়কুমার দাস জানান, নদীর বাঁধ বাঁধা থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন কর্মী যোগ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy