Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪

ন’নম্বর চটি চাইলেই হাতে নাইন এমএম

চটি-রহস্য তো জানা গেল। কারবারিদেরও তো ধরতে হবে! অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে ওই সাঙ্কেতিক ভাষাতেই কথা বলে ‘চটি’র বরাত দিয়ে কেল্লা ফতে করেছেন পুলিশ অফিসাররা।

প্রদর্শন: উদ্ধার হওয়া পিস্তল ও পিস্তলের খোল দেখাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র

প্রদর্শন: উদ্ধার হওয়া পিস্তল ও পিস্তলের খোল দেখাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
বারুইপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

ন’নম্বর চটির দাম কত পড়বে?

—২০-২২ টাকা দেবেন। ডজন নিলে কমিয়ে দেব।

সাত নম্বর?

—১৮ টাকা। এক দাম। একটি সুকতলা ফ্রি। ফিতে যেমন চাইবেন পাবেন। তবে সব নগদে। যেখানে বলবেন, পৌঁছে দেব। গাড়ি ভাড়া লাগবে না।

‘জুতো কারবারি’দের বাক্যালাপ? শুনতে তেমনই। কিন্তু বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের অফিসাররা ওই ফোনালাপে আড়ি পেতে ধরে ফেলেছিলেন সাঙ্কেতিক ভাষাটা। ন’নম্বর চটি মানে নাইন এমএম পিস্তল। সাত নম্বর মানে সেভেন এমএম পিস্তল। ‘সুকতলা’ বলতে ম্যাগাজিন। ‘ফিতে’ হল গুলি।

চটি-রহস্য তো জানা গেল। কারবারিদেরও তো ধরতে হবে! অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে ওই সাঙ্কেতিক ভাষাতেই কথা বলে ‘চটি’র বরাত দিয়ে কেল্লা ফতে করেছেন পুলিশ অফিসাররা। শুক্রবার রাতে বারুইপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ধরা পড়েছে তিন অস্ত্র কারবারি। হাওড়ার ডোমজুড়ের জিয়ারুল শেখ এবং মুঙ্গেরের কালাম মহম্মদ ও সাহেব আলম। ডোমজুড়ে জিয়ারুলদের পৈতৃক ভিটেতে অস্ত্র কারখানার হদিসও মিলেছে।

এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘কুলতলির এক জনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে লাগানোর কথা বলে ওই অস্ত্রের বরাত দেওয়া হয়েছিল ফোনে। ওই তিন জন ঝোলাতে অস্ত্র এনেছিলেন। তা ঢাকা ছিল নতুন চটিতেই!’’

আরও পড়ুন: বাংলার বিদ্যা নিয়ে ত্রিপুরায় রঞ্জিত কুমার পছনন্দা

তবে, কেল্লা ফতে করলেও যে ভাবে শুধু ফোনের বরাতেই এ রাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রায় ‘হোম ডেলিভারি’ হচ্ছে, তাতে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে পুলিশকর্তাদের কপালে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের মধ্যে জেরায় দু’জন এখনও কোনও কথা বলেনি। তবে, জিয়ারুল জানিয়েছে, একটি সেভেন এমএম পিস্তল তৈরি করতে হাজার আটেক টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ১৮ হাজারে। নাইন এমএম তৈরিতে খরচ প্রায় ১০ হাজার। বিক্রি হয় ২২ হাজার টাকায়। মোটা মুনাফার ব্যবসা। পুরোটাই নগদে। বছর দুয়েক ধরে সে অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি করছিল। ব্যবসায় তার অংশীদার ছিল কালাম ও সাহেব। মুঙ্গের থেকে ওরাই কারিগর আনাত। জিয়ারুল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থা করত। দু’বছরে শ’তিনেক আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দা-কর্তাদের।

কিন্তু কী ভাবে জিয়ারুলদের নাম পেল পুলিশ?

এক তদন্তকারী জানান, সপ্তাহ তিনেক আগে ক্যানিং স্টেশন থেকে প্রায় ৪০০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ-সহ তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা বাসন্তী-গোসাবা এলাকার বাসিন্দা। তাদের জেরা করেই জানা যায়, সাহেব ও কামালের কাছ থেকে তারা কার্তুজ কিনেছিল। তার পরে পুরোটাই পুলিশের চাল। যাতে ভেদ হল ‘চটি-রহস্য’।

তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, যে ভাবে প্রায় অবাধে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হচ্ছে, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। জিয়ারুলদের মতো আরও কোনও কারবারি এ ভাবে অস্ত্রের ব্যবসা চালাচ্ছে কিনা, রয়েছে সে প্রশ্নও। অনেকেই অনুমান করছেন, শুক্রবার ডোমজুড়ের অস্ত্র কারখানাটির হদিস মিললেও রাজ্যের নানা প্রান্তে এমন আরও কিছু গোপন কারখানা থেকে যেতে পারে। ধৃতদের পুরোদস্তুর জেরায় সে সবের খোঁজ মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Pistol Ammunition Guns Baruipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE