Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

‘বহিরাগত’ তকমা এখনও ঘুচল না দু’বারের বিধায়কের

শ্যামল গোষ্ঠীও পাল্টা অভিযোগ তুলতে ছাড়ে না। মাতলার চরে ম্যানগ্রোভ সাফ করা কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিধায়ক নিজেও।

ক্যানিংয়ে থমকে বাস টার্মিনাসের কাজ। নিজস্ব চিত্র

ক্যানিংয়ে থমকে বাস টার্মিনাসের কাজ। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৫১
Share: Save:

পর পর দু’বারের বিধায়ক হয়েও ‘বহিরাগত’ তকমা ঘোচেনি বিধায়কের। দলের একাংশই বলে সে কথা। আর সেই অংশটির সঙ্গে বিধায়কের সম্পর্কের ফাটল মেরামত তো হয়ইনি, বরং বেড়েছে দিন দিন। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলের বিরুদ্ধে দলের অন্য গোষ্ঠী তোলাবাজি, কাটমানির অভিযোগও করে। শ্যামল গোষ্ঠীও পাল্টা অভিযোগ তুলতে ছাড়ে না। মাতলার চরে ম্যানগ্রোভ সাফ করা কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির দুর্নীতির অভিযোগে সরব বিধায়ক নিজেও।
সব মিলিয়ে এখানকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দীর্ঘ ইতিহাস সামলেই এ বার আরও এক বিধানসভা ভোটের মুখোমুখি শাসক শিবির। ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শৈবাল লাহিড়ির বনাম ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি পরেশরাম দাসের আকচাআকচির প্রভাব ইভিএমে কী প্রভাব ফেলে, বিরোধীরা তার কতটা সুবিধা ঘরে তুলতে পারে— সে সব আলোচনাই ঘুরছে ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্রের বাতাসে।
ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা অতীতে কখনও ডান, কখনও বামেদের দখলে ছিল। ২০০৬ সালে এই বিধানসভা কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বাম প্রার্থী দ্বিজপদ মণ্ডল। তবে ২০১১ সালে বাম প্রার্থী জয়দেব পুরকাইতকে প্রায় ১৯,৬১৪ ভোটে হারিয়ে বিধায়ক হন তৃণমূলের শ্যামল। সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর ও সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান। প্রায় আড়াই বছর মন্ত্রী থাকার পরে মন্ত্রিত্ব খোয়ান শ্যামল।
মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শ্যামলের উপরেই ২০১৬ সালে ফের ভরসা রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বারও নেত্রীকে নিরাশ না করে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী অর্ণব রায়কে ১৮,৮২৬ ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্যানিং পশ্চিম কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন শ্যামল।
এক সময়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা অর্ণব সম্প্রতি আবার যোগ দিয়েছেন পদ্ম শিবিরে। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার কোথায় কী আছে আর কোথায় কী কাজ হয়েছে, তা বোধহয় বিধায়ক নিজেই জানেন না। উনি আসলে অন্যলোকের দ্বারা পরিচালিত হন। ওঁর নিজের কিছুই করার ক্ষমতা নেই।”
শ্যামল বলেন, ‘‘আমার বাড়ি আমার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। বিধানসভা এলাকায় না থাকলেও আমি সারা দিনই আমার কেন্দ্রের কোনও না কোনও প্রান্তে পড়ে থাকি। মানুষের কাজ করি। গত দশ বছরে ক্যানিং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে একের পর এক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। দিনের পর দিন বিভিন্ন দফতরে পড়ে থেকে সেখান থেকে ক্যানিংয়ে জন্য নানা ধরনের সরকারি প্রকল্প ছিনিয়ে এনেছি। ফলে কোথায় থাকি, তার থেকে বেশি জরুরি, আমি আমার কেন্দ্রের জন্য কী কাজ করি।’’
সেই কাজের ফিরিস্তি শোনালেন শ্যামল। জানালেন, ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স স্টেডিয়াম, সুইমিং পুল তৈরি হয়েছে। ইন্ট্রিগ্রেটেড মডেল স্কুল, আইটিআই কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। মহকুমা হাসপাতালে ১০০ শয্যা বেড়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে, সিসিইউ, সিটিস্ক্যান চালু হয়েছে হাসপাতালে। প্রায় আড়াইশো শয্যার মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়াও, ঘুটিয়ারিশরিফ ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালেরও প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক চুল্লি, কর্মতীর্থ হাট, পথের সাথীর মতো প্রকল্প তো আছেই। বেশিরভাগ রাস্তা হয় পিচ না হয় কংক্রিটের হয়েছে। নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বহু বাড়িতে। আরও কাজ চলছে। বাস টার্মিনাস তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়েছে। মহকুমা আদালত তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হবে বলেও জানালেন বিধায়ক।
তবে এরই মধ্যে গত সাড়ে চার বছরে ক্রমশ শক্তি বেড়েছে বিজেপির। গতবার বিজেপি প্রার্থী ছিলেন মনোজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘শ্যামল মণ্ডলের কাজে হতাশ ক্যানিংবাসী। পর্যটন শিল্পের উপরে অনেকটাই নির্ভর ক্যানিংয়ের অর্থনীতি। সে ক্ষেত্রে উনি কোনও উন্নয়ন করেননি। পরিকল্পনাহীন ভাবে সরকারি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। পথের সাথী থেকে শুরু করে ক্যানিংয়ের রাস্তার পাশের একাধিক হোটেলে যৌন ব্যবসা চলছে। কিন্তু বিধায়ক হিসেবে উনি কোনও ব্যবস্থা করেননি এগুলো বন্ধের জন্য। উনি নিজেদের দলীয় কোন্দলেই ব্যস্ত ছিলেন। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা, বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে কাটমানি খেয়েছেন বিধায়ক।” এ সব অভিযোগ অবশ্য ভিত্তিহীন বলেই দাবি শ্যামলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE