Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নেই কৌশিক, জৌলুস কমল কোজাগরীতে

তাঁর উদ্যোগেই বাড়ির কাছে চার বছর আগে শুরু হয়েছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। প্রতিমা আনা থেকে মণ্ডপের সাজসজ্জা— সবেতেই নেতৃত্ব দিতেন তিনি।

প্রগতি সঙঘের পুজো মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

প্রগতি সঙঘের পুজো মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৩
Share: Save:

তাঁর উদ্যোগেই বাড়ির কাছে চার বছর আগে শুরু হয়েছিল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।

প্রতিমা আনা থেকে মণ্ডপের সাজসজ্জা— সবেতেই নেতৃত্ব দিতেন তিনি।

হস্টেলে থাকলেও পুজোর আগে ছুটি পেলেই চলে আসতেন গ্রামে। বন্ধুবান্ধবেরর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলত পুজো নিয়ে।

সেই কৌশিক পুরকাইত এ বার নেই। গত ৯ মে ডায়মন্ড হারবারের পূর্ব বাহাদুরপুর গ্রামে মাসির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে মোষ চুরির অপবাদে খুন হতে হয়েছিল ওই আইটিআই ছাত্রকে। তাঁকে ছাড়াই এ বার লক্ষ্ণীপুজো হচ্ছে। বন্ধু পিন্টু পুরকাইত, প্রীতম হালদাররা বলছেন, ‘‘আগের বারও পুজোর সব আয়োজন করেছিল কৌশিক। আমাদের মন ভাল নেই। কিন্তু কৌশিকের স্মৃতি ধরে রাখতে এ বারে পুজো হচ্ছে ঠিকই। তবে আগের বারের মতো আনন্দ নেই।’’

পুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি এসে লুচি ঘুগনি খেয়েই বেরিয়ে যেত মণ্ডপে। পুজোর সমস্ত কাজ গুছিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সকাল। চোখে একরাশ জল নিয়ে এ কথা জানান কৌশিকের মা চন্দ্রাণী পুরকাইত।

মন্দিরবাজারে গুমকি গ্রামে বাড়ির পাশের একটি মাঠে বছর চারেক আগে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেছিলেন কৌশিক। মণ্ডপ থেকে শুরু করে পুজোর সব কিছুই তাঁরই নেতৃত্বে হতো। এ বারও পুজো হচ্ছে। কিন্তু নেই বছর বাইশের সেই ছেলেটি। এই গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। কিন্তু এলাকায় প্রায় ১০টি লক্ষ্মীপুজো হয়। অন্য ক্লাবের লক্ষ্মীপুজো দেখেই আদর্শ প্রগতি সঙ্ঘের কৌশিক পুজো শুরু করেছিলেন বলে জানান তাঁর বন্ধুরা। নিজের পুজোকে সেরা করার জন্য জান লড়িয়ে দিতেন কৌশিক। প্রতিমা থেকে শুরু করে মণ্ডপ সজ্জা সবই চলত তাঁর নির্দেশে। এ বারও মণ্ডপটি হয়েছে ক্লাবের সামনের ছোট মাঠটিতে। নেই শুধু কৌশক। পরিবর্তে বসেছে তাঁর মালা দেওয়া একটি ছবি। বন্ধুরা জানান, বছর চারেক আগে একদিন নিজেই হঠাৎ করে এসে বলেছিলেন, ‘‘লক্ষ্মী পুজো করা হবে। অন্য ক্লাবের মতো আমরাও বড় করে পুজো করব। নিরীহ শিক্ষিত ছেলেটিকে এ ভাবে খুন হতে হবে তা ভাবতে পারিনি কোনওদিনও।’’ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তাঁরা।

কৌশিকের দুই বোন জানান, দাদাকে খুব মনে পড়ছে। এ বার প্রথম দাদা ছাড়া পাড়ায় পুজো হচ্ছে। আগের বছর কলেজ থেকে এসেই দাদা পুজোর কাজে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কী ভাবে পুজোর মণ্ডপ সাজানো হবে তা নিয়ে চিন্তা করত পুজোর অনেক আগের থেকেই। কৌশিকের বাবা এক কোণায় দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। বলেন, ‘‘অপরাধীরা জামিন পেল। কিন্তু আমরা ওদের চরম শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ITI student Kaushik Laxmi puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE