প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মহিলাদের হাতে তৈরি হচ্ছে শান্তিনিকেতনী আদলের চামড়ার ব্যাগ। আপাতত একটি মহিলা সমিতির ২০ জন মহিলা এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় মহিলাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্যই এই পদক্ষেপ বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ভারত সরকারের ‘নমামী গঙ্গে’ প্রকল্পের আওতায় গত ছ’মাস ধরে গোসাবা ব্লকের রাঙাবেলিয়ায় চলছে এই প্রশিক্ষণ। বোলপুর থেকে প্রশিক্ষকেরা এসে কাজ শেখাচ্ছেন। এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে। প্রশিক্ষণের পরে রাঙাবেলিয়াতেই মহিলাদের কাজের ব্যবস্থা করা হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে এক আধিকারিক জানান, সুন্দরবনের মহিলারা অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। বিপদের মুখেও পড়েন। এখানে চাষবাস ছাড়া সে ভাবে কোনও শিল্প নেই। ফলে আর্থসামাজিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন মানুষ। তাঁদের বিকল্প পেশায় যুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। সংস্থার তরফে দাবি, শান্তিনিকেতনী ঘরানার চামড়ার ব্যাগের চাহিদা যথেষ্ট। মহিলারা লাভের মুখ দেখবেন।
এই কাজের সুযোগ পেয়ে খুশি এলাকার মহিলারা। সৌরী মণ্ডল, তপতী গুছাইতেরা বলেন, ‘‘এই কাজ করতে পেরে ভাল লাগছে। প্রশিক্ষণ পর্বে আমরা রোজগার করতেও শুরু করেছি। আমাদের তৈরি ব্যাগ ইতিমধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।’’ মহিলা সমিতির চেয়ারম্যান সাবিত্রী প্রধান বলেন, ‘‘১৯৭৭ সালে পদ্মশ্রী তুষার কাঞ্জিলালের স্ত্রী বীণাদেবী এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য এই সংস্থা গড়ে তোলেন। তখন থেকেই আমারা মেয়েদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কাজের ব্যবস্থার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
সুন্দরবনে আগত পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই এখানে বাটিক শিল্প, পাটের তৈরি জিনিস, কাঁথা স্টিচের সামগ্রী তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে প্রায় একশো জন মহিলা এখন এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শান্তিনিকেতনের শিল্প আর সুন্দরবনের ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে এই নতুন ব্যাগ তৈরির শিল্প যথেষ্ট জনপ্রিয় হবে বলেই আশাবাদী সকলে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)