Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিজের ভোট তো দিতেই হবে, জেদ ধরেছেন নুর

নুর সে বার জওয়ানদের সহযোগিতায় নিজের ভোটটা নিজে দিতে পেরেছিলেন। এ বারও পরিস্থিতি যা-ই ঘটুক, ভোট দিতে চান তিনি।

প্রস্তুতি: জঙ্গলে চললেন এঁরা। নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: জঙ্গলে চললেন এঁরা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৪
Share: Save:

মধু ভাঙতে জঙ্গলে যাচ্ছেন, ভোট দিতে যাবেন না?

নিজের ভোট নিজে দিতে পারব তো— উড়ে আসে পাল্টা প্রশ্ন!

কথা বলছিলেন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর উপকূলবর্তী থানার সুন্দরবন লাগোয়া কালীতলা পঞ্চায়েতের দু’নম্বর সামসেরনগরের নুর হোসেন গাজি। তিনি তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মধু সংগ্রহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকেই জানালেন, পঞ্চায়েতে ভোট দিতেই পারেননি। তবে এ বার ভোট দেবেনই, গোঁ ধরে বসেছেন নুর। বললেন, ‘‘ভোটের আগেই বাড়ি ফিরতেই হবে। নিজের ভোট নিজে দেবই দেব।’’

নুর সে বার জওয়ানদের সহযোগিতায় নিজের ভোটটা নিজে দিতে পেরেছিলেন। এ বারও পরিস্থিতি যা-ই ঘটুক, ভোট দিতে চান তিনি। কুড়েখালি নদীতে নৌকোর উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি বাঁধতে-বাঁধতে কথা বলছিলেন নুর। স্বামীর কথা শুনে রূপবান বিবি বলেন, ‘‘কেন যে এত স্পষ্ট কথা বলো, বুঝি না। জঙ্গলে যাও বলে কি তোমার ভয়-ডর কিছু নেই?’’

স্ত্রীর অনুযোগ শুনে গলা চড়িয়ে নুর বলেন, ‘‘বাঘ-কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে মধু ভেঙে, মাছ ধরে, কাঠ কেটে, কাঁকড়া ধরে পেট চালাই। অত ভয় পেলে কি চলবে আমাদের?’’ স্বামীর কথা শুনে রূপবান বলেন, ‘‘ভোট এলে যে ভাবে গ্রামে নিজের লোকও পর হয়ে গিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে নামে, তা বাঘ-কুমিরের থেকেও ভয়াবহ। তাই ভোট এলে ভয় লাগে।’’ বনবিবির নামে ফুল-বাতাসা দেওয়া হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। নৌকো ছাড়ার অপেক্ষা। সে দিকে তাকিয়ে দিদিমার আরও কাছে ঘেঁষে আসে নাতি ফিরোজ। প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সে। তাকে আঁকড়ে ধরেই রূপবান বলে চলেন, ‘‘কুড়েখালির পাশে জঙ্গলের জালের ধারে প্রায়ই বাঘ, হরিণ, বাঁদর, বুনো শুয়োর দেখা যায়। সত্যিই, জঙ্গলে কখন যে কী হয়, কে জানে!’’

কালীতলা পঞ্চায়েতের দু’নম্বর সামসেরনগরের অনেকেই মধু সংগ্রহে গিয়েছেন। কেউ কেউ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ রকমই একটি দলের পিন্টু মণ্ডল, নীহার গায়েন, নুর মহম্মদ গাজি এবং কার্তিক মণ্ডলকে নিয়ে জঙ্গলে চলেছেন নুর হোসেন গাজি। পনেরো দিনের লম্বা সফর। নৌকায় তোলা হয়েছে চাল-ডাল, আলু-পেঁয়াজ, জ্বালানি কাঠ। তৈরি করা হয়েছে মাটির উনুন। সঙ্গে নেওয়া হয়েছে মধু রাখার পাত্র। নুর গাজি বলেন, ‘‘আমরা এখানে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এক হয়ে বাঁচি। জঙ্গলই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা।’’

দিন পনেরো ধরে সংগ্রহ করা মধু বেচে চলে সারা বছর? প্রশ্ন শুনে ম্লান হাসেন নুর গাজি। বলেন, ‘‘৭-১০ কুইন্টাল মধু সংগ্রহ করতে পারলে তবেই দু’মুঠো ভাত-কাপড় জুটতে পারে।’’পঞ্চায়েত ভোটে গন্ডগোলের কারণে এই এলাকার বহু মানুষ নিজের ভোট দিতে পারেনি। সেই ক্ষোভ আছে তাঁদের মধ্যে। পাশ থেকে কথা বললেন ভবেন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘এখানকার পুরুষেরা জঙ্গলে যান। আর বেশির ভাগ মহিলা নদীতে নেমে মিন ধরার কাজ করেন। এঁদের অনেকেই সরকারি প্রকল্পের নানা সুবিধা পেয়েছেন। কেউ কেউ

অবশ্য পাননিও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Honey Farmers Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE