Advertisement
০৪ মে ২০২৪

এ বারও লড়াই মতুয়া-পরিবারেই 

সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুর নাম প্রার্থী হিসাবে মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে দল।

অভিনন্দন: টিকিট পেলেন শান্তনু। মায়ের হাতে মিষ্টি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক    

অভিনন্দন: টিকিট পেলেন শান্তনু। মায়ের হাতে মিষ্টি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক    

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

মতুয়া ঠাকুরবাড়িকে ‘রাজনীতি মুক্ত’ করতে চাওয়া শান্তনু ঠাকুরই এ বার বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়বেন বনগাঁ কেন্দ্র থেকে।

সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুর নাম প্রার্থী হিসাবে মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে দল। রাজ্যের প্রাক্তন তৃণমূল মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুরর দাদা সুব্রত গত উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে লড়েছিলেন বিজেপির টিকিটে। সে বার তৃণূলের প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন সুব্রত-শান্তনুর জেঠিমা মমতা ঠাকুর। তিনিও ঠাকুরবাড়ির বৌ। এ বার শান্তনু ভোটের ময়দানে নেমে পড়ায় বনগাঁ কেন্দ্রে লড়াই সেই পারিবারিকই দাঁড়াল। বিজেপি এই কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করবে, তা নিয়ে কিছু দিন ধরে দলের মধ্যে জলঘোলা হচ্ছিল। দিন কয়েক আগে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বাগদার বিধায়ক দুলাল বর। দুলাল সে সময়ে বলেছিলেন, ‘‘কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন, আরও ভাল খবর শুনতে চলেছেন।’’ ওই কথার মধ্যে তাঁর প্রার্থী হওয়ারই ইঙ্গিত পেয়েছিল রাজনৈতিক মহল।

কিন্তু দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ আড়ালে-আবডালে দুলালের বিরোধিতা শুরু করেন। এরই মধ্যে মতুয়াদের বড়মা, বীণাপাণি ঠাকুরের শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে ঠাকুরনগর গেলে দুলালকে কিছু মানুষের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়। বিড়ম্বনা এড়াতে দুলালকে দ্রুত ঠাকুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। ঘটনার পিছনের বিজেপির কোন্দল কাজ করেছিল বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল।

প্রার্থী ঘোষণার পরে কী বলছেন দুলাল? এ দিন তিনি ফোনে বলেন, ‘‘দল যাকে ভাল মনে করেছে, তাঁকে প্রার্থী করেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ শান্তনুর হয়ে প্রচারে নামছেন তো তা হলে? দুলালের জবাব, ‘‘দল যা নির্দেশ দেবে, তেমন ভাবেই কাজ করব।’’ তবে দুলাল অনুগামীরা জানাচ্ছেন, এই সিদ্ধান্তে তাঁরা হতাশ। তাঁরা আশা করেছিলেন, বনগাঁ না হলেও অন্তত রানাঘাট থেকে দুলাল প্রার্থী হচ্ছেন।

বিজেপির প্রার্থী-পদ নাটকীয় মোড় নেয় শনিবার দুপুর থেকে। ওই দিন বেশ কিছু মতুয়া ভক্ত ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে শান্তনুর কাছে দাবি জানান, তাঁকেই প্রার্থী হতে হবে। সেই দাবিতে সিলমোহর পড়ে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের তরফেও। শান্তনুও তখন আর অরাজি ছিলেন না। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়, তাঁর নাম ঘোষণা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যদিও তার আগে একাধিকবার শান্তনু জানিয়েছেন, ভোটে দাঁড়াবেন না তিনি।

প্রার্থী তালিকায় নিজের নাম আছে জেনে শান্তনু বলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম ঠাকুরবাড়িকে রাজনীতি মুক্ত করতে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মমতা ঠাকুর ভোটের টিকিট পেয়ে গিয়েছেন। ভক্তেরা আমাকে বলছেন, কই আপনি তো ঠাকুরবাড়ি রাজনীতি মুক্ত করতে পারলেন না। তা ছাড়া, বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর ও প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের দীর্ঘদিনের উদ্বাস্তু আন্দোলনকে রাজ্য সরকার ও মমতা ঠাকুর বিরোধিতা করে শেষ করে দিতে চাইছেন। সে কারণে ভক্তেরা আমার উপরে চাপ দিচ্ছিলেন, আমি যাতে ভোটে দাঁড়াই। মহাসঙ্ঘও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।’’ মমতা ঠাকুরের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘গোটাটাই শান্তনুর নাটক। প্রথম থেকেই ওর ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। ভোটে দাঁড়াবে না বলে এত দিন নাটক করেছে। মতুয়া ভক্তেরা এই দ্বিচারিতার জবাব দেবেন।’’

গত কয়েক মাস ধরে শান্তনুর সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। মতুয়া ধর্মসভায় প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির প্রথমসারির বহু নেতা-নেত্রীকে শান্তনুর সঙ্গে দেখাও গিয়েছে। ফলে তিনিই ছিলেন দলের স্বাভাবিক পছন্দ। দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘যোগ্য প্রার্থী হিসাবে শান্তনু মনোনয়ন পেয়েছেন। আমরা খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE