Advertisement
০২ মে ২০২৪
kakdwip

দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে অনুপস্থিত অনেক পরীক্ষার্থী

গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ১২৫ জন ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছে। কিন্তু দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে মাত্র ৯০ জন। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে ১২১ জন।

টেস্ট দিচ্ছে পড়ুয়ারা। কাকদ্বীপের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

টেস্ট দিচ্ছে পড়ুয়ারা। কাকদ্বীপের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১২
Share: Save:

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে স্কুলগুলিতে টেস্ট চলছে। ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, খাতায় নাম থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই পরীক্ষায় বসেনি। কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার বেশিরভাগ স্কুলেই একই পরিস্থিতি।

গঙ্গাসাগর শ্রীধাম হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ১২৫ জন ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছে। কিন্তু দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে মাত্র ৯০ জন। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে ১২১ জন। দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে ৮০ জন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনয় মণ্ডল বলেন, ‘‘দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে প্রায় ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত। এদের মধ্যে ৪০ জন ছাত্রী। খোঁজ নিয়ে জেনেছি এদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিছু ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করে বাড়িতে আছে। ছেলেদের অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুলের তরফে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও এরা ক্লাসে ফেরেনি।

নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ এলাকায় বালিয়াড়া কিশোর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১০২ জন ছাত্রছাত্রী। অথচ দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে ৮১ জন। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ৭৫ জন ছাত্রছাত্রী। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে ৭০ জন ছাত্রছাত্রী। এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরিন্দম মাইতি বলেন, ‘‘লকডাউন পরবর্তী সময়ে অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। ছেলেদের মধ্যে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। টাকা হাতে আসায় এক্ষেত্রে সায় থাকছে পরিবারেরও।’’

সাগরের বামনখালি এমপিপি হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৪৭ জন ছাত্রছাত্রী। দশম শ্রেণির টেস্টে উপস্থিত হয়েছে ১১৭ জন। অন্যদিকে, একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৬২ জন। এদের মধ্যে টেস্টে বসেছে ১২৪ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমিত্র দাস বলেন, ‘‘আমার স্কুলে প্রতি বছরই অষ্টম শ্রেণির পর থেকে ছাত্রদের সংখ্যা কমতে থাকে। এদের বেশিরভাগই ভিন্ রাজ্যে দর্জির কাজে চলে যায়। ছাত্রীদের বিয়ে হচ্ছে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার অনেক আগেই। করোনার পর এই সমস্যা আরও বেড়েছে।’’

এলাকার অন্যান্য স্কুলগুলিরও পরিস্থিতি প্রায় একই। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনা অতিমারিতে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার অভ্যাসটাই চলে গিয়েছে। আগের শেখা জিনিস ভুলে গিয়েছে পড়ুয়ারা। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে স্বাভাবিক হয়েছে পঠনপাঠন। তবে দু’বছর পর পরীক্ষা ছাড়াই দু’ক্লাস উপরে উঠে গিয়েছে পড়ুয়ারা। কিন্তু উঁচু ক্লাসের পড়া সামাল দিতে পারেনি ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই। ফলে, পড়াশোনায় আগ্রহ কমেছে তাদের। অধিকাংশ স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পুজোর ছুটির পর থেকে স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি হার কমে ৬৫-৭০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে।

অভিভাবকদের একাংশ জানালেন, তাঁরা চান, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। কিন্তু মেয়েদের অনেকেই বন্ধুদের দেখে পালিয়ে বিয়ে করে নিচ্ছে। ছেলেদের মধ্যেও আশপাশের বন্ধুবান্ধব-স্কুলের দাদাদের দেখে বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে বাড়ছে। অল্প বয়সে হাতে টাকা আসার পর তারা আর পড়াশোনার জগতে ফিরতে চাইছে না।

শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘শিক্ষা সামাজিক চেতনা বাড়ায়। ছেলেরা অল্প বয়সে শিক্ষা থেকে সরে যাচ্ছে। মেয়েরা বিয়ে করে অপরিণত বয়সে মা হচ্ছে। এর ফল সুদূরপ্রসারী। কারণ, শিশুদের জীবনে প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। তারাই শিক্ষা সম্পূর্ণ করছে না। এর ফল ভুগতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE