কাজ করে না ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র।
বছর দু’য়েক আগে হাবরার নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছিল ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। উদ্দেশ্য ছিল, অপরাধমূলক কাজ কমানো এবং দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সে সব ক্যামেরা খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধায়ক তহবিলের প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকায় ১৭টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। ক্যামেরার মনিটর ছিল হাবরা থানায়। সেখান থেকেই পুলিশ শহরের উপরে নজরদারি চালাত। ওই ব্যবস্থায় হাবরাবাসী তো বটেই, বিশেষত খুশি হয়েছিলেন ব্যবসায়ী মহল। ক্যামেরা বসানোর পরে অবশ্য শহরে অপরাধমূলক ঘটনাও তেমন ঘটেনি বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারাই।
কিন্তু গত বছর দুর্গাপুজোর পর থেকে ৯টি ক্যামেরা খারাপ হয়ে যায়। দু’টি সম্প্রতি সারানো হলেও বাকিগুলি মেরামত হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, শহরের নিরাপত্তার জন্য ক্যামেরাগুলি মেরামত করে দ্রুত চালু করা হোক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সংস্থা ওই ক্যামেরা বসিয়েছিল তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা জানিয়েছে, ওয়ারেন্টির মেয়াদ এক বছর আগেই পেরিয়ে গিয়েছে। এখন আর নিখরচায় মেরামত করে যাবে না। আবার নতুন করে টেন্ডার করতে হবে।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘বিধায়ক তহবিলে টাকা না থাকার কারণে ওই সংস্থার সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করা যায়নি। তবে ভোট মিটে গিয়েছে। এ বার ক্যামেরাগুলি ঠিক করার ব্যবস্থা করা হবে।’’
কয়েক বছর আগে হাবরায় একের পর এক চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজি, গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এমনকী, খুনের ঘটনাও ঘটেছিল। এই এলাকা ‘অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল’ বলে এক সময়ে পরিচিত ছিল। জেলার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী কেন্দ্র এই শহর। রোজ কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। জেলার বাইরে থেকেও এখানে ব্যবসায়ীরা কাজের প্রয়োজনে আসেন। তাঁরাও নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন।
হাবরা ও সংলগ্ন এলাকায় অতীতে অপরাধমূলক ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ২০১১ সালে নগরউখরা মোড়ের কাছে একটি মিষ্টির দোকানের গোডাউন থেকে কয়েক লক্ষ টাকা-সহ প্রায় ২ টন ওজনের একটি লোহার সিন্দুক নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার কিনারা আজও করতে পারেননি পুলিশ।
প্রফুল্লনগর এলাকায় একটি রক্তদান শিবির চলাকালীন সেখানে হামলা চালিয়ে বোমা-গুলি মেরে খুন করা হয়েছিল এক কংগ্রেস নেতা ও এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মীকে। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীরা এখানে এসে নিরাপদ ডেরায় গা ঢাকা দিয়ে থাকে। এক সময়ে ব্যবসায়ীরা রাস্তা দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে ভয় পেতেন। লুঠের ঘটনা ঘটেছে বহুবার। শহরে প্রায় তিনশো সোনার দোকান রয়েছে। কয়েক বছর আগে ভরসন্ধ্যায় স্টেশন রোডে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়েছিল। তারপর থেকে বহু দিন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন কাটিয়েছেন।
তবে ক্যামেরাগুলি বসানোর পরে কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলেন তাঁরা। এখন আবার আতঙ্কের দিন গোনা শুরু হয়েছে। এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছেন। শহরেও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থাকায় আমরা নিরাপদ বোধ করছিলাম। কিন্তু বেশ কিছু ধরে কয়েকটি ক্যামেরা খারাপ। কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও অপরাধীদের চিহ্নিত করত। এখন আর সম্ভব নয়।’’ তবে এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কমেছে বলে একই সঙ্গে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।
মিষ্টি ব্যবসায়ী শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘শহরের নিরাপত্তা বাড়াতে ক্যামেরা বসানোর বিধায়কের উদ্যোগ খুব ভাল ছিল। আইন-শৃঙ্খলারও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই দ্রুত খারাপ ক্যামেরাগুলি ঠিক করা হোক।’’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেস নেতা বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, ‘‘কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।’’
পুলিশ জানিয়েছে, ক্যামেরা বসানোর পরে কয়েকটি অপরাধমূলক ঘটনার দ্রুত হদিস পাওয়া গিয়েছিল। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করাও সম্ভব হয়েছিল ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, একটি মন্দিরে ঘণ্টা চুরি। ব্যাঙ্ক থেকে কেপমারির টাকা উদ্ধার হয়েছিল এই ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে।
ভোট মিটেছে। এ বার বাকি ক্যামেরা কবে সুস্থ হয়ে ওঠে, সে দিকেই তাকিয়ে শহরবাসী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy