Advertisement
০৬ মে ২০২৪

রেহানার হাত ধরে চিকিৎসা দরিদ্রদের

কখনও গ্রামে চিকিৎসক এনে সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। আবার কখনও স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেন। দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। আর এ সব করেই তিনি এখন গ্রামের মানুষের নয়নমণি।

পরিষেবা: ওষুধ দিচ্ছে রেহানা। নিজস্ব চিত্র

পরিষেবা: ওষুধ দিচ্ছে রেহানা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

কখনও গ্রামে চিকিৎসক এনে সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। আবার কখনও স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেন। দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। আর এ সব করেই তিনি এখন গ্রামের মানুষের নয়নমণি।

তিনি রেহানা রহমান। সমাজ সেবার কাজে একাই নেমে পড়েছেন। কোনও সংগঠনের সাহায্য নেই তাঁর সঙ্গে। যেটুকু ধন-সম্পত্তি আছে, তা দিয়েই গরিব মানুষের সেবা করেন। তবে পাশে পেয়েছেন স্বামী মাজেদার রহমানকে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মা রাজিয়া বেগম ও ভাই শেখনূর আহমেদ আরঙ্গজেবও তাঁকে সাহায্য করেন। রেহানা বলেন, ‘‘বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সেবা করে তৃপ্তি পাই।’’

গত তিন মাসের মধ্যে দু’হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন রেহানা। দিয়েছেন ওষুধ-পথ্যও। এক সময়ে ঠিক এ ভাবে গরিব-দুঃস্থ্ মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সেবা করতেন চাঁদনগরের জনপ্রিয় কংগ্রেস নেতা হারুন আল রশিদও। তাঁরই মেয়ে রেহানা।

রেহেনা জানান, বেশ কয়েক বছর আগের কথা। তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়েন। বসিরহাট ২ ব্লকের কংগ্রেস নেতা হারুন দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন। বাবার মৃত্যুটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো গেঁথে গিয়েছিল মেয়ের মনে। সে দিন বসিরহাটের চাঁদনগর, শ্রীনগর, বেঁকি, চৈতা এবং মাটিয়া-সহ আশেপাশের কয়েকটা গ্রামের মানুষকে চাঁদনগরের বাড়ির সামনে বুক চাপড়ে কাঁদতে দেখেছিল ছোট্ট রেহানা। তা দেখে গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করে। এরপরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। কিন্তু বাবার মৃত্যুর সময়ে করা প্রতিজ্ঞার কথা ভোলেননি রেহানা। অল্প বয়সে বিয়ে হয় চাঁদনগরের রেহানারা। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথা বললে স্বামীও তাতে সায় দেন। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে গ্রামে বসানো হয়। সেখানে কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও আনা হয়। গ্রামের গরিব মানুষকে কলকাতায় নিয়ে গিয়েও চিকিৎসার ব্যবস্থা করান রেহানা।

গ্রামের মানুষ জানান, শুধু চিকিৎসা-পর্বটুকুই নয়, তারপরে শরীরের খোঁজ-খবর নেওয়া, দেখাশোনা করা, এমনকী মাসে মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করেন রেহানা। নিজের বাড়ি থেকে ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতি মাসের শেষ মঙ্গলবারে দুঃস্থ মানুষের জন্য চিকিৎসক আসেন গ্রামে। রেহেনা বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ে রশ্মিতা ও হেনা। তারাও এখন প্রতিষ্ঠিত। দুঃস্থদের সেবার কাজে ওরাও আমার সঙ্গে আছে।’’

চাঁদনগরের কন্যার কাজে মুগ্ধ গ্রামবাসী। স্থানীয় প্রাক্তন বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি বলেন, ‘‘যে ভাবে নীরবে গ্রামের গরিব মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন রেহানা, তা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। প্রয়োজনে ওঁকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে আমরা রাজি আছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE