Advertisement
E-Paper

পুরনো ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়ে হাবরায় প্রতিবাদ সভা বিজেপির

গত ২৯ জুলাই বিধ্বংসী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অশোকনগর-হাবরার বিস্তীর্ণ এলাকা। পরদিন ত্রাণ নিয়ে এলাকায় এসে হেনস্থা হতে হয়েছিল বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। স্থানীয় মানুষের বাধায় গাড়ি নিয়ে বেশিরভাগ এলাকায় ঢুকতেই পারেননি রূপা। ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৪২
বাঁ দিকে, ৩০ জুলাই তখন বিধ্বস্ত রূপা। ফাইল চিত্র। ডান দিকে, রবিবারের সভায় খোসমেজাজে নেত্রী। ছবি: শান্তনু হালদার।

বাঁ দিকে, ৩০ জুলাই তখন বিধ্বস্ত রূপা। ফাইল চিত্র। ডান দিকে, রবিবারের সভায় খোসমেজাজে নেত্রী। ছবি: শান্তনু হালদার।

ছ’মাস বাদে মনে পড়ল প্রতিবাদের কথা!

গত ২৯ জুলাই বিধ্বংসী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অশোকনগর-হাবরার বিস্তীর্ণ এলাকা। পরদিন ত্রাণ নিয়ে এলাকায় এসে হেনস্থা হতে হয়েছিল বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। স্থানীয় মানুষের বাধায় গাড়ি নিয়ে বেশিরভাগ এলাকায় ঢুকতেই পারেননি রূপা। ঘটনায় মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরে শহরে বসে শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ উগরে দিলেও এলাকায় গিয়ে প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এত দিন বাদে টনক নড়েছে। রবিবার দলের নব নির্বাচিত রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, এ রাজ্যে নিযুক্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং স্বয়ং রূপাকে নিয়ে হাবরার হিজলপুকুরে একটি ক্লাবের মাঠে ‘প্রতিবাদ সভা’ করল বিজেপি। মেরেকেটে হাজার খানেক লোকের ভিড়ের সভায় রূপা বললেন, ‘‘সেই অপমানের শোধ কী করে তুলব বলুন তো!’’

বিজেপির অন্দরে গুঞ্জন, তৃণমূলের বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে হাবরায় বিজেপির অভিনেত্রী প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে কড়া টক্কর নেওয়ার পরিকল্পনা করছে দল। যা নিয়ে প্রশ্ন করলে অবশ্য ফুঁসে উঠেছেন রূপা। মঞ্চ থেকে নেমে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের কথা ভেবে আসিনি। যেখানেই যাই মানুষ আমাকে ভালবাসে।’’

৩০ জুলাই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রূপা যখন পৌঁছেছিলেন অশোকনগর-হাবরায়, তাঁর ত্রাণসামগ্রী-বোঝাই গাড়িতেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। রূপা এ দিন বলেন, ‘‘সে দিন যে গাড়িটা ভেঙেছিল ওরা, সেই গাড়ি নিয়েই এসেছি।’’ তৃণমূলকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ওরা বলেছে এলাকায় ঢুকতে দেবে না। আমি আপনাদের ঘরে ঘরে গিয়ে বসে থাকব। দেখব, তখন কে আটকায়।’’

এ দিন প্রতিবাদ সভার ঝাঁঝের কথা শুনে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাঁরাই তো ঘটনার কথা ভুলে গিয়েছেন! আর তা ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে তো সরকারই দাঁড়িয়েছিল।’’

সত্যিই তো, প্রতিবাদ সভা করতে এত সময় লাগল কেন? তাতে ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু বজায় থাকে? এটা কি খুঁচিয়ে ঘা করা হয়ে যাচ্ছে না?

বিজেপির অন্দরের একটি সূত্র বলছে, রূপাদেবীর ত্রাণ-সফরে সে সময়ে দলীয় শিলমোহর পায়নি। দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলে বসেন, রূপা ব্যক্তিগত ভাবে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে তৃণমূলের হাতে হেনস্থা হওয়ার পরে দলীয় ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়াননি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তা নিয়ে রূপার অভিমানও কম ছিল না। এখন জমানা বদলেছে। নতুন রাজ্য সভাপতি এসেছেন। ক্ষমতা এসেছে রূপাদেবীর হাতেও। তার উপর সামনে ভোট। এত সব কিছুর জেরেই ছ’মাস বাদে হলেও প্রতিবাদে সভার আয়োজন। যাকে সামনে রেখে উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের আগে জল মেপে নিতে চাইছে দল।

বস্তুত, সে সময়ে রূপাদেবীর সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে গিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোপে পড়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার। তাঁকে কিছু দিনের মধ্যেই অন্য কারণ দেখিয়ে সাসপেন্ড করা হয়। রাজ্য সভাপতি বদলের পরে অবশ্য সাসপেন্ড উঠেছে তাঁর উপর থেকে।

ত্রাণ বিলির সেই প্রসঙ্গ টেনে রূপাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘সে দিন যাঁরা আমার কাছে আসতে চেয়েছিলেন, তাঁদের কথা ভেবে দুঃখ হচ্ছে। আমরা সে দিন জানতে চাইনি, কে তৃণমূল করেন, সে কংগ্রেস করেন, কে সিপিএম। এই মন নিয়েই আমরা এসেছিলাম। কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকলে এই ধরনের কোনও কাজে নিয়ম বাধা হতে পারে না।’’ রূপাদেবীর এই মন্তব্য রাহুলবাবুর সে দিনের অবস্থানের জবাব বলেই মনে করছে বিজেপিরই একটি অংশ।

রূপাদেবীকে হেনস্থার কথা এ দিন দলের রাজ্য সভাপতির বক্তব্যেও উঠে এসেছে। সেই প্রসঙ্গেই রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘গত সাড়ে চার বছরে তৃণমূল মানুষকে খেপিয়ে তুলেছে। ২০১৬ সালে পরিত্রাণের সুযোগ এসেছে। বাঁচার সুযোগ এসেছে।’’ কৈলাস বিজয়বর্গীও ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মহিলাদের উপরে নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবার করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই মতো আশ্বাসও মিলেছে বলে তাঁর দাবি। কৈলাসের কথায়, ‘‘শরণার্থীদের আমরা যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে আমরা এখানে রেখে দেব। তাঁদের নাদরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’

এ দিন অনুষ্ঠান শেষে হাবরা বাজারে দুর্গামন্দিরে যান রূপা। সেখানে গিয়ে কথা বলেন অনেকের সঙ্গে। তাঁকে মালা পরিয়ে দেন একজন। হাসিমুখে তা গ্রহণও করেন নেত্রী। শ্রীনগর গেট, নগরউখরা গেট, হিজলপুকুরের মতো যে সব জায়গায় ৩০ জুলাই বাধা পেতে হয়েছিল তাঁকে, সে সব জায়গায় ঘুরে দেখেন রূপাদেবী। অনেকের সঙ্গে কথা বলে নিজের মোবাইল নম্বর দেন। অনেকের নাম-ঠিকানা লিখে নেন। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতেও বলেন।

সব মিলিয়ে হাবরা থেকেই উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়ে গেলেন বিজেপির শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা।

state news bjp rupa ganguly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy