Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Midday Meal Scheme

রাতারাতি ভোলবদল বহু স্কুলে, কেন্দ্রীয় দল ফিরে গেলে এ সব থাকবে তো, প্রশ্ন

সাগরের শিকারপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, কাঠের উনুনে রান্না হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, গ্যাস সংযোগ খারাপ থাকায় রান্নার জন্য কাঠই ভরসা।

Picture of serving midday meal in a school.

নিয়ম-পালন: মাথা ঢেকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। কাকদ্বীপের একটি স্কুলে। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৬
Share: Save:

মিড ডে মিলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল। তার জেরে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই স্কুলে স্কুলে ‘তৈরি থাকার’ নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। মঙ্গলবার দুই জেলার বিভিন্ন স্কুলে ঘুরে দেখা গেল, নানা খামতি ঢাকতে প্রস্তুতি চলছে। অনেক স্কুল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। খাওয়ার ঘর, রান্না ঘরের পরিকাঠামোয় বদল এসেছে। রাঁধুনি-সহায়িকারা এপ্রন-দস্তানা পরে কাজ সারছেন।

Advertisement

তবে অনেকেরই প্রশ্ন, সারা বছর এ ভাবেই কেন মিড ডে মিলের প্রক্রিয়া চলে না? কেন কেন্দ্রীয় দল আসার খবরে এত প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে? কেন্দ্রীয় দল চলে গেলেও এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে তো?

অনেক স্কুলে অবশ্য নির্দেশিকার পরেও বদলায়নি ব্যবস্থা। একাধিক স্কুলে কাঠের উনুনেই রান্না হচ্ছে। অনেক জায়গায় খাবার তৈরির পরে শিক্ষক-অভিভাবকদের পরীক্ষা করে দেখার কথা থাকলেও তা হয়নি।

এ দিন দুপুরে কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনে গিয়ে দেখা গেল, মাথায় টুপি, হাতে দস্তানা, গায়ে এপ্রন পরে মিড ডে মিলের কাজ সারছেন কর্মীরা। সারা বছর কি এ ভাবেই রান্না করেন? সুমিত্রা বাছাড় নামে এক কর্মী বলেন, “পুরোপুরি এমন ব্যবস্থা সারা বছর থাকে না। কেন্দ্রীয় দল আসবে বলে কয়েক দিন আমাদের পরিষেবা ঠিকঠাক করে রাখতে বলেছেন স্কুল ও প্রশাসনের লোকজন।”

Advertisement

এ দিন হাসনাবাদের একটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুখে মাস্ক ও মাথায় কাপড়ে ঢেকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। অবিভাবকদের দাবি, এত দিন এই ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।

কাকদ্বীপ শিশুশিক্ষা নিকেতনে গিয়ে দেখা গেল, সবে মিড ডে মিল দেওয়া শুরু হয়েছে। টুপি, এপ্রন পরে কাজ করছেন কর্মীরা। বাচ্চাদের দেওয়ার আগে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবকেরা খাবার পরীক্ষা করে দেখেন? দিপালী মণ্ডল নামে এক কর্মী বলেন, “আমরাই রান্না করে খাবার চেখে দেখে বাচ্চাদের দিই।” স্কুলে খাবার ঘরের দেওয়ালে একাধিক জায়গায় চোখে পড়ল ঝুল। দিপালী বলেন, “ঝাড়ুদার আছেন। তিনি পরিস্কার করেন। অল্প কিছু থেকে গিয়েছে হয় তো।”

সাগরের শিকারপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, কাঠের উনুনে রান্না হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, গ্যাস সংযোগ খারাপ থাকায় রান্নার জন্য কাঠই ভরসা। স্কুল সূত্রের খবর, আলাদা খাওয়ার ঘর নেই। বারান্দায় বসেই খায় বাচ্চারা।

Picture of preparing midday meal in a school.

মাস্ক পরে, মাথা কাপড়ে ঢেকে মিড-ডে মিলের রান্না চলছে। হাসনাবাদের একটি স্কুলে। ছবি: নির্মল বসু

কাকদ্বীপ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ব্লকে ১৫২টি প্রাথমিক ও ৫৯টি হাইস্কুল আছে। কয়েকটি স্কুলে খাবার ঘরের সমস্যা আছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। নতুন করে গ্যাস সংযোগও দেওয়া শুরু হয়েছে।

একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আলাদা করে কিছুই পরিবর্তন করার দরকার পড়েনি। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বরাবর খাবার দেওয়া হয়। মিনাখাঁর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, সরকারি নির্দেশিকা এবং যে নিয়ম আছে, তা মেনেই পড়ুয়াদের খাবার দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় দল পরিদর্শনে আসছেন বলে কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি।

অভিভাবকদের অনেকেই অবশ্য জানালেন, টুপি, এপ্রন, দস্তানা— এ সব আগে দেখা যেত না। ক’দিন ধরে হচ্ছে। খাওয়ার ঘর, রান্না ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নও রাখা হচ্ছে। এক মহিলার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় দল চলে যাওয়ার পরেও এই পরিবেশ বজায় থাকলে ভাল হয়।”

কাকদ্বীপের বিডিও ঋক গোস্বামী বলেন, ‘‘স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। কিছু স্কুলে খাবার ঘরের সমস্যা ছিল, তা মিটে গিয়েছে। কিছু স্কুলে গ্যাসের সংযোগ বাকি আছে। তাঁরাও তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.