Advertisement
২৪ মে ২০২৪

স্ত্রীর জায়গায় এলেন স্বামী, বনগাঁর নতুন পুরপ্রধান পদে শঙ্কর আঢ্যই

‘প্রত্যাশিত’ ভাবেই বনগাঁ পুরসভার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর আঢ্য। আগের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শঙ্করবাবুর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য। পুরভোটে শঙ্করবাবু ও জ্যোৎস্নাদেবী দু’জনেই জয়লাভ করেছেন। ফলে পুর প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিস্তর আলোচনাও হয়েছিল।

পাশে জ্যোৎস্না, পুরপ্রধানের চেয়ারের দিকে এগোচ্ছেন নতুন পুরপ্রধান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পাশে জ্যোৎস্না, পুরপ্রধানের চেয়ারের দিকে এগোচ্ছেন নতুন পুরপ্রধান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

‘প্রত্যাশিত’ ভাবেই বনগাঁ পুরসভার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর আঢ্য। আগের বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন শঙ্করবাবুর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য। পুরভোটে শঙ্করবাবু ও জ্যোৎস্নাদেবী দু’জনেই জয়লাভ করেছেন। ফলে পুর প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিস্তর আলোচনাও হয়েছিল। পুরবাসীর মধ্যেও কৌতুহল তৈরি হয়েছিল পুরপ্রধান কে হচ্ছেন তা নিয়ে।

কেন বিগত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পরিবর্তন করা হল?

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘শঙ্কর গত পাঁচ বছর ধরে পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্যের উন্নয়নমূলক কাজে সব রকম সহযোগিতা করেছেন। উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা শঙ্করের মাথা থেকে বের হয়। সব থেকে বড় কথা, দলের প্রতি ওঁর আনুগত্য। তা ছাড়া, গত বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে শঙ্করের ভূমিকা আমাকে চাপমুক্ত করেছিল।’’ জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে এমন দরাজ শংসাপত্র পেয়ে খুশি শঙ্করবাবুও। বস্তুত, জ্যোৎস্নাদেবী গত পাঁচ বছর পুরপ্রধান পদে থাকলেও বকলমে যে শঙ্করবাবুই যে পুরসভা চালাতেন, তা এলাকার মানুষের সকলেরই জানা। এ বার সামনে থেকেই সেই দায়িত্ব পান শঙ্করবাবু, তা চেয়েছিলেন স্থানীয় নেতত্বের বড় অংশও।

বছর তিতাল্লিশের শঙ্করবাবুর (এলাকার মানুষ যাঁকে এক ডাকে চেনেন ডাকু নামে) রাজনৈতিক পদোন্নতি ও সামাজিক প্রভাব কার্যত শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। সে সময় থেকেই জ্যোতিপ্রিয়বাবুর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। ২০০৫ সালে বনগাঁর প্রয়াত বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ শেঠের উদ্যোগে শঙ্করবাবু প্রথমবারের জন্য পুরসভার ভোটে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন। ২০১০ সালে নিজের ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি ভোটে না দাঁড়িয়ে প্রার্থী করেছিলেন স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবীকে। ভোটে জিতে জ্যোৎস্নাদেবী পুরপ্রধান হন। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই শঙ্করবাবু, বনগাঁ রেড ক্রস সোসাইটির সম্পাদক, বনগাঁ মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ও পরে বনগাঁ শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিও হয়েছিলেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনেরও গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি সামলাছেন।

নিজের সাফল্যের পিছনে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ভূমিকার কথা ভোলেননি শঙ্করবাবু। জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে নিজের ‘রাজনৈতিক অভিভাবক’ বলেও মন্তব্য করেছেন। কী বলছেন জ্যোৎস্নাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করি নতুন পুরবোর্ড মানুষকে আরও ভাল পরিষেবা দিতে পারবে।’’

মঙ্গলবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গোটা বনগাঁ শহর তৃণমূলের পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ নব নির্মিত পুরভবনের হলঘরে নতুন কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায়। এ দিনই দুপুরে স্থানীয় খেলাঘর ময়দানে নির্বাচিত পুর প্রধান ও দলীয় কাউন্সিলরদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ ও নেতানেত্রীরা ছিলেন।

পুরপ্রধান হয়ে কী বলছেন শঙ্করবাবু? তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমেই আমরা বনগাঁ শহরে যানজট সমস্যা মেটানোর দিকে লক্ষ্য দেবো। শহরের মধ্যে একটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস তৈরি করব, যাতে যানজট সমস্যা কমানো যায়। তা ছাড়া শহরকে আরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করব। সৌন্দর্যায়ন করব। আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতেও জোর দেওয়া হবে।’’

তবে এ দিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সুর কেটেছে কিছুটা। সিপিএমের একমাত্র জয়ী প্রার্থী মানবেন্দ্র কর্মকার অনুষ্ঠানে হাজির হননি। পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাইনি। বুধবার সকাল ১১টার সময়ে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে শপথ নেব।’’

সিপিএম সূত্রের খবর, ভোটে এ বার বনগাঁয় শাসকদলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ছাপ্পা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বামেরা। তাদের দাবি, নির্বাচনের নামে এখানে প্রহসন হয়েছে। সে কারণেই প্রতিবাদ জানাতে সিপিএম প্রার্থী এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাননি।

শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে না এসে মানবেন্দ্রবাবু ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত মানুষকে অসম্মান করেছেন। কারণ তিনি ওই ওয়ার্ডের মানুষের আর্শীবাদেই ভোটে জিতেছেন। আমরা দাবি করছি, উনি মহকুমাশাসকের কাছে গিয়ে কাউন্সিলরের পদ থেকে পদত্যাগ করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bongaon municipality chairman shankar adhya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE