Advertisement
১৬ জুন ২০২৪
Old Man Lynched

মাদকাসক্তের মারে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার ঝিকরা এলাকায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভরত-বিশাখা ছাড়াও গ্রামের আরও দুই ব্যক্তির উপরে উত্তম হামলা চালিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ০৯:১২
Share: Save:

খেত থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছিলেন ভরত সরকার (৬০)। বাড়ির বাইরে মাদকাসক্ত যুবকের সঙ্গে স্থানীয় এক গোয়ালার গোলমাল বাধে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ভরত। অভিযোগ, আচমকাই মাদকাসক্ত যুবক শাবল দিয়ে ভরতকে মাথার পিছনে ঘা মারে। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন ভরত। বিশাখা সরকার নামে এক মহিলা তাঁকে বাঁচাতে গেলে মাদকাসক্ত যুবক তাঁর পায়ে-পিঠে শাবলের ঘা বসিয়ে দেয়। মহিলার চিৎকার আশপাশের লোকজন এসে যুবককে ধরে ফেলেন। মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিশাখা ও ভরতকে উদ্ধার করে পুলিশ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ভরতের মৃত্যু হয়। বিশাখা চিকিৎসাধীন। পুলিশ অভিযুক্ত উত্তম ঢালিকে গ্রেফতার করেছে। ভরতের দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না তদন্তে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার ঝিকরা এলাকায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভরত-বিশাখা ছাড়াও গ্রামের আরও দুই ব্যক্তির উপরে উত্তম হামলা চালিয়েছে। সৌমেন রায় নাম এক ব্যক্তিকে বাঁশ দিয়ে মাথায় ঘা মারে। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীপঙ্কর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি স্নান সেরে ফিরছিলেন। তাঁকে উত্তম মারধর করে বলে অভিযোগ।

গ্রামবাসীরা জানালেন, উত্তম মাদকাসক্ত। কয়েক বার নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। ফিরে এসে আবার হেরোইনের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তারা তিন ভাই-বোন। উত্তমের দৌরাত্ম্যে ভাই গৌতম ভিন্‌ রাজ্যে কাজ চলে গিয়েছেন। বাড়ি আসেন না। বোন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন। আত্মীয়-পরিজন কেউ উত্তমদের বাড়ি আসে না। সারা দিন নেশা করে থাকে সে। হাতে টাকা না থাকলে নেশা করতে না পেরে উন্মাদের মতো আচরণ করে। লোকজনকে মারধর করে। এ দিনও নেশা করতে না পেরে গোলমাল শুরু করেছিল।

ভরতের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী অপর্ণা এ দিন বড় মেয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। সকালে ভরত খেতে পটলে ফুল ছুঁইয়ে বাড়ি ফেরেন। সে সময়ে উত্তমের সঙ্গে এক গোয়ালার গোলমাল চলছিল। ভরত বেরিয়ে তা দেখতে গিয়েই এই বিপত্তি।

উত্তমের বাবাও চাইছেন ছেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক বার চিকিৎসা করিয়েছি। ৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছি। বেঙ্গালুরুতে কাজ করত। ভাল আয় করে বাড়ি ফিরেছিল। সব টাকা নেশা করে উড়িয়ে দিয়েছে। গাঁজার নেশা করে সারাক্ষণ। হেরোইনও খায়। আমি কিছু বললে মারধর করতে আসে।’’ গ্রামে মাদকের কারবার বন্ধ করুক পুলিশ, সেই দাবিও করেছেন উত্তমের বাবা।

গ্রামবাসীরা জানালেন, মাদকাসক্তদের দৌরাত্ম্যে তাঁরা অতিষ্ঠ। হেরোইনের খুচরো কারবার চলছে এলাকায়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আংরাইল এবং ঝাউডাঙা এলাকা থেকে কারকাবিরা ঝিকরা এলাকায় হেরোইন পৌঁছে দিচ্ছে। গ্রামের কয়েক জন যুবক এখনও নেশামুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। মাদকাসক্তেরা গ্রামের পুকুর পাড়ে, লেবু খেতে, চাষের খেতে বসে নেশা করে। চাষিরা প্রতিবাদ করলে ফসল নষ্ট করে। ছোটখাট চুরি লেগেই আছে গ্রামে। নেশার টাকা জোগাড় করতেই কিছু যুবক চুরি করে বলে অভিযোগ গ্রামের মানুষের।

পুলিশ জানিয়েছে, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Addicts Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE