খোলা মাঠে-ঘাটে আর শৌচকর্ম নয়। স্বচ্ছ মিশনের আওতায় উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা গড়তে উদ্যোগী হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। তাদের ঘোষণা মতো, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু বাদ সেধেছে ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত। ঠিকাদারেরা শৌচাগার নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের মজুরি, ইমারতি দ্রব্যের দাম মেটাতেও হিমসিম খাওয়ার জোগাড়। ফলে ডায়মন্ড হারবারের প্রতিটি ব্লকে কাজের গতি থমকে গিয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে জেলাশাসকের নির্দেশ মতো দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা করা হবে বলে ঠিক পরিকল্পনা করা হয়। তড়িঘড়ি নভেম্বরের শুরু থেকে প্রতিটি ব্লকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে কাজের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। শৌচাগার নির্মাণের জন্য সরকারি ঘোষণা মতো ১০,৯০০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহক দেবেন ৯০০ টাকা। বাকি ১০ হাজার টাকার ৬০ শতাংশ দেবে কেন্দ্র। ৪০ শতাংশ দেওয়ার কথা রাজ্যের।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অধীনে শৌচাগার নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতেই চলচিল। কিন্তু বাধ সেধেছে নোট-বিভ্রাট। সংকটে পড়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা। শ্রমিকদের মজুরি বা ইমারতি দ্রব্যের নগদ টাকা মেটাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা তাঁদের।
কুলপির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধীনে শৌচাগার নির্মাণের কাজ চলছে। একটি শৌচাগার নির্মাণে মিস্ত্রির খরচ ৪৫০-৫০০ টাকা। কাজের শেষে প্রতিদিন মজুরি মেটাতে হয়। কিন্তু খুচরো টাকার অভাবে পুরো মজুরি মেটানো যাচ্ছে না। আবার ব্যাঙ্ক থেকে খুটরো নোটে যে অল্প পরিমাণ টাকা মিলছে, সকলের মজুরি তাতে কুলোচ্ছে না।
সংস্থার কর্ণধার সত্যরঞ্জন মণ্ডল জানালেন, খুচরো টাকার সমস্যার জন্য শ্রমিকদের মজুরি দিতে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার বেনিফিসিয়ারিরা যে পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট ধরাচ্ছেন, তা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ হাজার শৌচাগার নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত আরও ২০০০ হাজার শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি থাকলে কী ভাবে কী হবে, কে জানে!’’
৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে শৌচাগার তৈরির কাজ যাতে থমকে না যায়, সে জন্য সভা ডেকেছেন কুলপির বিডিও সঞ্জীব সেন। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবেই হোক ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ শেষ করতেই হবে।’’
নোট বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছেন মথুরাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার কর্ণধার মদন হালদার বলেন, ‘‘আমার কাছে প্রতি দিন ৮০-৯০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সকলকে মজুরি দিতে কালঘাম ছুটছে। আবার ইমারতি দোকানে গেলে সেখানে টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ ব্যাঙ্ক থেকে খুব সামান্য টাকাই মিলছে।’’ তিনি জানালেন, সোমবার একটি ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে দুপুরে লাইন দিয়েছিলেন। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরে যখন কাউন্টারে পৌঁছলেন, ততক্ষণে টাকা শেষ!
নোটের সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মথুরাপুরের বিডিও মুজিবর রহমান বলেন, ‘‘নোট বাতিলের পরে শ্রমিকদের বেতন মেটানো নিয়ে নানা অভিযোগ ঠিকাদারেরা করছেন। আমরা সরকারি টাকা চেকের মাধ্যমে পাঠালেও কিন্তু ব্যাঙ্ক প্রয়োজন মতো খুচরো টাকা একেবারই সরবরাহ করছে না।’’ তিনি জানালেন, শৌচাগার নির্মাণ যাতে নোটের সমস্যার জন্য আটকে না যায়, সে জন্য একাধিক সভাও করেছেন।
কিন্তু এ সবের পরেও যে পরিস্থিতি পুরোপুরি সামাল দেওয়া মুশকিল হচ্ছে, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy